পরিচ্ছেদঃ ৬৪/৩০. খন্দকের যুদ্ধ। এ যুদ্ধকে আহযাবের যুদ্ধও বলা হয়।
قَالَ مُوْسَى بْنُ عُقْبَةَ كَانَتْ فِيْ شَوَّالٍ سَنَةَ أَرْبَعٍ.
মূসা ইবনু ‘উকবাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, এ যুদ্ধ ৪র্থ হিজরী সনের শাওয়াল মাসে হয়েছিল।
৪০৯৭. ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, উহূদ যুদ্ধের দিন তিনি (যুদ্ধের জন্য) নিজেকে পেশ করার পর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দেননি। তখন তাঁর বয়স ছিল চৌদ্দ বছর। তবে খন্দক যুদ্ধের দিন তিনি নিজেকে পেশ করলে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অনুমতি দিলেন। তখন তাঁর বয়স পনের বছর। [২৬৬৪] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৭৯৪)
[*] মুসলিমদের সামরিক তৎপরতা চালানোর ফলে জাজিরাতুল আরাবে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। চারিদিকে মুসলিমদের প্রভাব প্রতিপত্তির বিস্তার ঘটে। এ সময় ইয়াহূদীরা তাদের ঘৃণ্য আচরণ, ষড়যন্ত্র এবং বিশ্বাসঘাতকতার নানা ধরনের অবমাননা ও অসম্মানের সম্মুখীন হয়। কিন্তু তবু তাদের ‘আকল হয়নি। খায়বারে নির্বাসনের পর ইয়াহূদীরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে, কিন্তু উত্তরোত্তর দূর দূরান্তে ইসলামের জয়জয়কার ছড়িয়ে পড়ার ফলে ইয়াহূদীরা হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছারখার হতে লাগল। হিজরী পঞ্চম সনের ঘটনা। যেহেতু বনূ নাযীর খায়বারে নির্বাসিত হয়েও নিশ্চুপে বসে ছিল না সেহেতু তারা মুসলিমদের মুলোৎপাটনের জন্য এক সম্মলিত চেষ্টা চালাবার দৃঢ় সংকল্প করেছিল, যার মধ্যে আরবের সমস্ত গোত্র-উপগোত্রের বীর যোদ্ধা শামিল থাকে।
তারা বিশ জন নেতার উপর এই দায়িত্ব অর্পণ করে যে, তারা সমস্ত গোত্রকে আক্রমণের জন্যে উত্তেজিত করবে। এই চেষ্টার ফল এই দাঁড়াল যে, হিজরী পঞ্চম সনের যুলকা’দাহ্ মাসে (যাদুল মাআ‘দ, ১ম খন্ড, ৩৬৭ পৃষ্ঠ) দশ হাজার রক্ত পিপাসু সৈন্য, যাদের মধ্যে মূর্তিপূজক, ইয়াহূদী প্রভৃতি সবাই শামিল ছিল, মদীনাহর উপর আক্রমণ করে। কুরআন মাজীদে এই যুদ্ধের নাম হচ্ছে আহযাবের যুদ্ধ। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী গোত্রগুলি হলঃ
১। কুরাইশ, বানূ কিনানাহ্, আহলে তিহামাহ- সেনাপতি সুফ্ইয়ান ইবনু হারব।
২। বানূ ফাযারাহ- সেনাপতি উকবা’ ইবনু হুসায়ন।
৩। বানূ মুররাহ- সেনাপতি হারিস ইবনু ‘আওফ।
৪। বানূ আশজা’ ও আহলি নাজদ- সেনাপতি মাস‘ঊদ ইবনু দাখীলা।
মুসলিমরা যখন দেখলেন যে, এই সেনাবাহিনীর সাথে মুকাবালা করার শক্তি তাদের নেই তখন তারা শহরের চতুর্দিকে খন্দক খনন করলেন। দশ দশজন লোক চল্লিশ গজ করে খন্দক খনন করেছিলেন। (তবারী, ২য় খন্ড)
মুসলিমদের সংখ্যা ছিল মাত্র তিন হাজার। ইসলামী সেনাবাহিনী মদীনাহর ভিতরেই এভাবে অবস্থান করলেন যে, সামনে ছিল খন্দক এবং পিছনে ছিল সালা (যাদুল মাআ‘দ, ৩৬৭ পৃষ্ঠা) পর্বত। আর ইয়াহূদী, বানূ কুরাইযাহ- যারা মদীনাহ্য় বসবাস করতো এবং যাদের চুক্তি অনুযায়ী মুসলিমদের সাথে যোগ দেয়া একান্ত যরুরী ছিল- তাদের সাথে রাত্রির অন্ধকারে বানূ নাযীর ইয়াহূদীদের নেতা হুইয়াই ইবনু আখতাব মিলিত হলো এবং চুক্তি ভঙ্গ করার জন্যে উত্তেজিত করে নিজের দিকে ডেকে নিলো। রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বুঝাবার জন্যে নিজের কয়েকজন দলপতিকে তাদের নিকট বার বার প্রেরণ করলেন। কিন্তু তারা পরিষ্কারভাবে বলে দিলোঃ ‘‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যে, আমরা তাঁর কথা মেনে চলবো? তাঁর সাথে আমাদের কোনই চুক্তি ও অঙ্গীকার নেই। (ইবনু হিশাম, ২য় খন্ড, ১৪১ পৃষ্ঠা)
এরপর বানূ কুরাইযাহ শহরের নিরাপত্তায় বাধা সৃষ্টি করল এবং মুসলিম মহিলা ও শিশুদেরকে বিপদে ফেলে দিল। সুতরাং বাধ্য হয়ে তিন হাজার মুসলিম সৈন্যের মধ্য হতেও একটি অংশকে শহরের সাধারণ নিরাপত্তা রক্ষার জন্যে পৃথক করতে হলো। বানূ কুরাইযাহ মনে করেছিল যে, যখন বাহির হতে শত্রু পক্ষের দশ হাজার বীর যোদ্ধার আক্রমণ সংঘটিত হবে এবং তারা শহরের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা ছড়িয়ে দিয়ে মুসলিমদের নিরপত্তা নষ্ট করে দিবে তখন দুনিয়ায় মুসলিমদের নাম নিশানাও বাকী থাকবে না।
নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু স্বাভাবিক যুদ্ধকে ঘৃণার চোখে দেখতেন, সেহেতু তিনি সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করলেন যে, উৎপাদিত ফলের এক তৃতীয়াংশ প্রদানের শর্তে আক্রমণমুখী গাতফান নেতৃবর্গের সাথে সন্ধি করে নেয়া হোক। কিন্তু আনসার দল যুদ্ধকেই প্রাধান্য দিলেন। সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ) এবং সা‘দ ইবনু উবাইদাহ (রাঃ) এই প্রস্ত্ততি সম্পর্কে ভাষণ দিতে দিয়ে বলেনঃ ‘‘যে সময় এই আক্রমণমুখী গোত্রগুলো শির্কের পংকিলে ও মূর্তি পূজার মধ্যে নিমজ্জিত ছিল ঐ সময়েও আমরা তাদেরকে একটা ছড়া পর্যন্ত প্রদান করিনি। আর আজ যখন মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় দান করেছেন তখন কী করে আমরা তাদেরকে আমাদের উৎপাদিত ফলের এক তৃতীয়াংশ প্রদান করতে পারি? তাদের জন্যে আমাদের কাছে তরবারি ছাড়া কিছুই নেই।’’ আক্রমণকারী সৈন্যদের অবরোধ এক মাস বা এক মাসের কাছাকাছি পর্যন্ত ছিল। মাঝে মাঝে দু‘একটি খন্ডযুদ্ধও সংঘটিত হয়। ‘আম্র ইবনু আবদে ওদ, যে নিজেকে এক হাজার বীর পুরুষের সমান মনে করতো, আল্লাহত্ম সিংহ, আলীর (রাঃ) হাতে নিহত হয়। নওফিল ইবনু আবুদিল্লাহ ইবনু মুগীরাও মুকাবালায় মারা যায়। মক্কাহ্বাসীরা নওফিলের মৃতদেহ নেয়ার জন্যে দশ হাজার দিরহাম মুসলিমদের সামনে পেশ করে। রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বলেনঃ ‘‘মৃতদেহ দিয়ে দাও, মুল্যের প্রয়োজন নেই।’’ (ইবনু হিশাম।)
যখন তারা অবরুদ্ধ মুসলিমদের কোনই ক্ষতি সাধন করতে পারলো না তখন তাদের সাহস হারিয়ে গেল। পৌত্তলিকদের জোটে ভাঙ্গন ধরার পর এবং তাদের মধ্যে হতাশা ও পারস্পরিক অবিশ্বাস সৃষ্টির পর আল্লাহ তাদের উপর ঝড়ো বাতাস পাঠিয়ে দিলেন। বাতাস কাফিরদের সব কিছু তছনছ করে দিল। অবশেষে তারা ময়দান ছেড়ে পালিয়ে গেল।
بَاب غَزْوَةِ الْخَنْدَقِ وَهِيَ الْأَحْزَابُ
يَعْقُوْبُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيْدٍ عَنْ عُبَيْدِ اللهِ قَالَ أَخْبَرَنِيْ نَافِعٌ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَرَضَهُ يَوْمَ أُحُدٍ وَهُوَ ابْنُ أَرْبَعَ عَشْرَةَ سَنَةً فَلَمْ يُجِزْهُ وَعَرَضَهُ يَوْمَ الْخَنْدَقِ وَهُوَ ابْنُ خَمْسَ عَشْرَةَ سَنَةً فَأَجَازَهُ.