পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৪৪-[৭] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি, (ঈদের দিনে) হাবাশী যুবকরা যখন মসজিদের আঙিনায় বর্শা নিয়ে খেলা করছিল, তখন আমি তাঁর ঘাড় ও কানের ফাঁক দিয়ে তাদের খেলা দেখতে পারি সেজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাদর দিয়ে আমাকে ঢেকে রেখেছিলেন এবং (আমার মুহাববাতে) ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতেন যতক্ষণ না আমি স্বেচ্ছায় ফিরে আসতাম। অতএব এটাই অনুমেয় যে, একজন অল্পবয়স্কা মেয়ের খেলা দেখার প্রতি যে স্বাভাবিক মনোবাসনা, (কত দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে) তা অনুমান করা যায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ عِشْرَةِ النِّسَاءِ وَمَا لِكُلِّ وَاحِدَةِ مِّنَ الْحُقُوْقِ
وَعَنْهَا قَالَتْ: وَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُومُ عَلَى بَابِ حُجْرَتِي وَالْحَبَشَةُ يَلْعَبُونَ بِالْحِرَابِ فِي الْمَسْجِدَ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتُرُنِي بردائه لِأَنْظُرَ إِلَى لَعِبِهِمْ بَيْنَ أُذُنِهِ وَعَاتِقِهِ ثُمَّ يَقُومُ مِنْ أَجْلِي حَتَّى أَكُونَ أَنَا الَّتِي أَنْصَرِفُ فَاقْدُرُوا قَدْرَ الْجَارِيَةِ الْحَدِيثَةِ السِّنِّ الْحَرِيصَةِ على اللَّهْو
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে (يَقُوْمُ) শব্দটি ‘মাযী’ বা অতীতকালের হেকায়েতের হাল বা অবস্থা বর্ণনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। (حُجْرَتِىْ) এর ইয়াফতটি লামে ইখতিসাস বা বিশেষত্ববাচক। এ লাম মিলকিয়াতের অর্থ প্রদান করার সম্ভাবনাও বিদ্যমান রয়েছে।
(وَالْحَبَشَةُ يَلْعَبُونَ) বাক্যটি জুমলাতু হালিয়া হয়েছে, তার অর্থ হলো : ‘‘আর হাবাশীরা (সেখানে) খেলাফরত ছিল।’’ (الْحِرَابِ) শব্দটি حربة-এর বহুবচন এর অর্থ ছোট বর্শা বা বল্লাম।
হাবাশীরা মসজিদ সংলগ্ন প্রশস্ত জায়গায় বর্শা পরিচালনার প্রশিক্ষণমূলক খেলায় লিপ্ত ছিল। কেউ বলেছেন, এ জায়গাটি ছিল মসজিদের বাইরে, কেউ বলেছেন ভিতরেই। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কামরা মসজিদ সংলগ্ন ছিল। তাই তিনি কামরার মধ্যে থেকেই তাদের খেলা দেখছিলেন। এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং নিজেই দেখার সুব্যবস্থা করে দিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় চাদর দ্বারা পর্দা করে দাঁড়ালেন আর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে দাঁড়িয়ে কাঁধ ও কানের মাঝের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে তাদের খেলা উপভোগ করলেন। যুদ্ধ যেহেতু ‘ইবাদাত, সুতরাং যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষা করাও আবশ্যক।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘কাফিরদের সাথে (মোকাবেলার জন্য) তোমাদের সাধ্যানুযায়ী শক্তি (সংগ্রহ কর এবং) প্রস্তুত করো।’’ (সূরা আল আনফাল ৮ : ৬০)
সুতরাং মসজিদ প্রাঙ্গণে অথবা মসজিদের মধ্যে এ ধরনের খেলা শারী‘আতসম্মত। আর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর দেখার বিষয়টি ছিল পর্দার বিধান জারী হওয়ার পূর্বের ঘটনা। ‘আল্লামা তূরিবিশতীও এমনটিই বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, মসজিদে খেলায়রত হাবাশীরা ছিল বয়সে অপ্রাপ্ত বয়স্ক। সুতরাং তাদের প্রতি তাকানো অবৈধ ছিল না।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) যতক্ষণ দাঁড়িয়ে খেলা দেখলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ততক্ষণ পর্যন্তই দাঁড়িয়ে তাকে খেলা উপভোগ করার সুযোগ দিলেন। এটা ছিল তার প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বোচ্চ ভালোবাসা এবং মনস্থাত্বিক দিক বিবেচনার চূড়ান্ত নমুনা। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিজস্ব বর্ণনাতেই বুঝা যায় যে, খেলা দেখার এ সময়টি ছিল দীর্ঘ, আর এই দীর্ঘ সময়ই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁড়িয়ে ছিলেন।
(ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫১৯০; শারহে মুসলিম ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৮৯২)