পরিচ্ছেদঃ ৬৪/১৬. আবূ রাফি‘ ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু আবুল হুকায়কের হত্যা।
৪০৩৯. বারাআ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুল্লাহ ইবনু আতীককে আমীর বানিয়ে তার নেতৃত্বে আনসারদের কয়েকজন সাহাবীকে ইয়াহূদী আবূ রাফির (হত্যার) উদ্দেশে প্রেরণ করেন। আবূ রাফি‘ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কষ্ট দিত এবং এ ব্যাপারে লোকদেরকে সাহায্য করত। হিজায ভূমিতে তার একটি দূর্গ ছিল (যেখানে যে বাস করত)। তারা যখন তার দূর্গের কাছে গিয়ে পৌঁছলেন তখন সূর্য ডুবে গেছে এবং লোকজন নিজেদের পশু পাল নিয়ে রওয়ানা হয়েছে (নিজ নিজ গৃহে) ‘আবদুল্লাহ (ইবনু আতীক) তার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের স্থানে বসে থাক। আমি চললাম, ভিতরে প্রবেশ করার জন্য দ্বার রক্ষীর সঙ্গে আমি কৌশল দেখাই। এরপর তিনি সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজার কাছে পৌঁছলেন এবং কাপড় দ্বারা নিজেকে এমনভাবে ঢাকলেন যেন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রত আছেন। তখন সবাই ভিতরে প্রবেশ করলে দারোয়ান তাকে ডেকে বলল, ওহে ‘আবদুল্লাহ্! ভিতরে ঢুকতে চাইলে ঢুকে পড়। আমি এখনই দরজা বন্ধ করে দেব। আমি তখন ভিতরে প্রবেশ করলাম এবং আত্মগোপন করে থাকলাম। সকলে ভিতরে প্রবেশ করার পর সে দরজা বন্ধ করে দিল এবং একটি পেরেকের সঙ্গে চাবিটা লটকিয়ে রাখল।
[‘আবদুল্লাহ ইবনু আতীক (রাঃ) বলেন] এরপর আমি চাবিটার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং চাবিটা নিয়ে দরজাটি খুললাম। আবূ রাফি‘র নিকট রাতের বেলা গল্পের আসর বসত, এ সময় সে তার উপর তলার কামরায় অবস্থান করছিল। গল্পের আসরে আগত লোকজন চলে গেলে, আমি সিঁড়ি বেয়ে তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। এ সময় আমি একটি করে দরজা খুলছিলাম এবং ভিতর দিক থেকে তা আবার বন্ধ করে দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাতে লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে পারলেও হত্যা না করা পর্যন্ত আমার নিকট পৌঁছতে না পারে। আমি তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। এ সময় সে একটি অন্ধকার কক্ষে ছেলেমেয়েদের মাঝে শুয়েছিল। কক্ষের কোন্ অংশে সে শুয়ে আছে আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। তাই আবূ রাফি‘ বলে ডাক দিলাম। সে বলল, কে আমাকে ডাকছ? আমি তখন আওয়াজটি লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে তরবারি দ্বারা প্রচন্ড জোরে আঘাত করলাম। আমি তখন কাঁপছিলাম। এ আঘাতে আমি তার কোন কিছুই করতে পারলাম না। সে চীৎকার করে উঠলে আমি কিছুক্ষণের জন্য বাইরে চলে আসলাম। এরপর পুনরায় ঘরে প্রবেশ করে (কন্ঠস্বর পরিবর্তন করতঃ তার আপন লোকের ন্যায়) জিজ্ঞেস করলাম, আবূ রাফি‘ এ আওয়াজ হল কিসের? সে বলল, তোমার মায়ের সর্বনাশ হোক! একটু আগে ঘরের ভিতর কে যেন আমাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করেছে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আতীক (রাঃ) বলেন, তখন আমি আবার তাকে ভীষণ আঘাত করলাম এবং মারাত্মকভাবে ক্ষত বিক্ষত করে ফেললাম। কিন্তু তাকে হত্যা করতে পারিনি। তাই তরবারির ধারাল দিকটি তার পেটের উপর চেপে ধরলাম এবং পিঠ পার করে দিলাম। এবার আমি নিশ্চিতরূপে বুঝলাম যে, এখন আমি তাকে হত্যা করতে পেরেছি। এরপর আমি এক এক করে দরজা খুলে নীচে নামতে শুরু করলাম। নামতে নামতে সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছলাম। পূর্ণিমার রাত্র ছিল। (চাঁদের আলোতে তাড়াহুড়ার মধ্যে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে না পেরে) আমি মনে করলাম, (সিঁড়ির সকল ধাপ অতিক্রম করে) আমি মাটির নিকটে এসে পড়েছি। (কিন্তু তখনও একটি ধাপ অবশিষ্ট ছিল) তাই নিচে পা রাখতেই আমি পড়ে গেলাম। অমনিই আমার পায়ের গোছার হাড় ভেঙ্গে গেল। আমি আমার মাথার পাগড়ি দিয়ে পা খানা বেঁধে নিলাম এবং একটু হেঁটে গিয়ে দরজার সামনে বসে রইলাম। মনে মনে স্থির করলাম, তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে আজ রাতে আমি এখান থেকে যাব না। ভোর রাতে মোরগের ডাক আরম্ভ হলে মৃত্যু ঘোষণাকারী প্রাচীরের উপরে উঠে ঘোষণা করল, হিজায অধিবাসীদের অন্যতম ব্যবসায়ী আবূ রাফির মৃত্যু সংবাদ শুন। তখন আমি আমার সাথীদের নিকট গিয়ে বললাম, তাড়াতাড়ি চল, আল্লাহ্ আবূ রাফিকে হত্যা করেছেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলাম এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। তিনি বললেন, তোমার পা লম্বা করে দাও। আমি আমার পা লম্বা করে দিলে তিনি তাতে স্বীয় হাত বুলিয়ে দিলেন। (তাতে এমন সুস্থ হলাম) যেন আমি কোন আঘাতই পায়নি। [৩০২২] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৭৪১)
بَاب قَتْلِ أَبِيْ رَافِعٍ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي الْحُقَيْقِ
يُوْسُفُ بْنُ مُوْسَى حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ مُوْسَى عَنْ إِسْرَائِيْلَ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ بَعَثَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى أَبِيْ رَافِعٍ الْيَهُوْدِيِّ رِجَالًا مِنَ الْأَنْصَارِ فَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَتِيْكٍ وَكَانَ أَبُوْ رَافِعٍ يُؤْذِيْ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَيُعِيْنُ عَلَيْهِ وَكَانَ فِيْ حِصْنٍ لَهُ بِأَرْضِ الْحِجَازِ فَلَمَّا دَنَوْا مِنْهُ وَقَدْ غَرَبَتْ الشَّمْسُ وَرَاحَ النَّاسُ بِسَرْحِهِمْ فَقَالَ عَبْدُ اللهِ لِأَصْحَابِهِ اجْلِسُوْا مَكَانَكُمْ فَإِنِّيْ مُنْطَلِقٌ وَمُتَلَطِّفٌ لِلْبَوَّابِ لَعَلِّيْ أَنْ أَدْخُلَ فَأَقْبَلَ حَتَّى دَنَا مِنَ الْبَابِ ثُمَّ تَقَنَّعَ بِثَوْبِهِ كَأَنَّهُ يَقْضِيْ حَاجَةً وَقَدْ دَخَلَ النَّاسُ فَهَتَفَ بِهِ الْبَوَّابُ يَا عَبْدَ اللهِ إِنْ كُنْتَ تُرِيْدُ أَنْ تَدْخُلَ فَادْخُلْ فَإِنِّيْ أُرِيْدُ أَنْ أُغْلِقَ الْبَابَ فَدَخَلْتُ فَكَمَنْتُ فَلَمَّا دَخَلَ النَّاسُ أَغْلَقَ الْبَابَ ثُمَّ عَلَّقَ الْأَغَالِيْقَ عَلَى وَتَدٍ قَالَ فَقُمْتُ إِلَى الْأَقَالِيْدِ فَأَخَذْتُهَا فَفَتَحْتُ الْبَابَ وَكَانَ أَبُوْ رَافِعٍ يُسْمَرُ عِنْدَهُ وَكَانَ فِيْ عَلَالِيَّ لَهُ فَلَمَّا ذَهَبَ عَنْهُ أَهْلُ سَمَرِهِ صَعِدْتُ إِلَيْهِ فَجَعَلْتُ كُلَّمَا فَتَحْتُ بَابًا أَغْلَقْتُ عَلَيَّ مِنْ دَاخِلٍ قُلْتُ إِنِ الْقَوْمُ نَذِرُوْا بِيْ لَمْ يَخْلُصُوْا إِلَيَّ حَتَّى أَقْتُلَهُ فَانْتَهَيْتُ إِلَيْهِ فَإِذَا هُوَ فِيْ بَيْتٍ مُظْلِمٍ وَسْطَ عِيَالِهِ لَا أَدْرِيْ أَيْنَ هُوَ مِنَ الْبَيْتِ فَقُلْتُ يَا أَبَا رَافِعٍ قَالَ مَنْ هَذَا فَأَهْوَيْتُ نَحْوَ الصَّوْتِ فَأَضْرِبُهُ ضَرْبَةً بِالسَّيْفِ وَأَنَا دَهِشٌ فَمَا أَغْنَيْتُ شَيْئًا وَصَاحَ فَخَرَجْتُ مِنَ الْبَيْتِ فَأَمْكُثُ غَيْرَ بَعِيْدٍ ثُمَّ دَخَلْتُ إِلَيْهِ فَقُلْتُ مَا هَذَا الصَّوْتُ يَا أَبَا رَافِعٍ فَقَالَ لِأُمِّكَ الْوَيْلُ إِنَّ رَجُلًا فِي الْبَيْتِ ضَرَبَنِيْ قَبْلُ بِالسَّيْفِ قَالَ فَأَضْرِبُهُ ضَرْبَةً أَثْخَنَتْهُ وَلَمْ أَقْتُلْهُ ثُمَّ وَضَعْتُ ظِبَةَ السَّيْفِ فِيْ بَطْنِهِ حَتَّى أَخَذَ فِيْ ظَهْرِهِ فَعَرَفْتُ أَنِّيْ قَتَلْتُهُ فَجَعَلْتُ أَفْتَحُ الْأَبْوَابَ بَابًا بَابًا حَتَّى انْتَهَيْتُ إِلَى دَرَجَةٍ لَهُ فَوَضَعْتُ رِجْلِيْ وَأَنَا أُرَى أَنِّيْ قَدْ انْتَهَيْتُ إِلَى الْأَرْضِ فَوَقَعْتُ فِيْ لَيْلَةٍ مُقْمِرَةٍ فَانْكَسَرَتْ سَاقِيْ فَعَصَبْتُهَا بِعِمَامَةٍ ثُمَّ انْطَلَقْتُ حَتَّى جَلَسْتُ عَلَى الْبَابِ فَقُلْتُ لَا أَخْرُجُ اللَّيْلَةَ حَتَّى أَعْلَمَ أَقَتَلْتُهُ فَلَمَّا صَاحَ الدِّيْكُ قَامَ النَّاعِيْ عَلَى السُّوْرِ فَقَالَ أَنْعَى أَبَا رَافِعٍ تَاجِرَ أَهْلِ الْحِجَازِ فَانْطَلَقْتُ إِلَى أَصْحَابِيْ فَقُلْتُ النَّجَاءَ فَقَدْ قَتَلَ اللهُ أَبَا رَافِعٍ فَانْتَهَيْتُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَحَدَّثْتُهُ فَقَالَ ابْسُطْ رِجْلَكَ فَبَسَطْتُ رِجْلِيْ فَمَسَحَهَا فَكَأَنَّهَا لَمْ أَشْتَكِهَا قَطُّ.
Narrated Al-Bara bin Azib:
Allah's Messenger (ﷺ) sent some men from the Ansar to ((kill) Abu Rafi`, the Jew, and appointed `Abdullah bin Atik as their leader. Abu Rafi` used to hurt Allah's Messenger (ﷺ) and help his enemies against him. He lived in his castle in the land of Hijaz. When those men approached (the castle) after the sun had set and the people had brought back their livestock to their homes. `Abdullah (bin Atik) said to his companions, "Sit down at your places. I am going, and I will try to play a trick on the gate-keeper so that I may enter (the castle)." So `Abdullah proceeded towards the castle, and when he approached the gate, he covered himself with his clothes, pretending to answer the call of nature. The people had gone in, and the gate-keeper (considered `Abdullah as one of the castle's servants) addressing him saying, "O Allah's Servant! Enter if you wish, for I want to close the gate." `Abdullah added in his story, "So I went in (the castle) and hid myself. When the people got inside, the gate-keeper closed the gate and hung the keys on a fixed wooden peg. I got up and took the keys and opened the gate. Some people were staying late at night with Abu Rafi` for a pleasant night chat in a room of his. When his companions of nightly entertainment went away, I ascended to him, and whenever I opened a door, I closed it from inside. I said to myself, 'Should these people discover my presence, they will not be able to catch me till I have killed him.' So I reached him and found him sleeping in a dark house amidst his family, I could not recognize his location in the house. So I shouted, 'O Abu Rafi`!' Abu Rafi` said, 'Who is it?' I proceeded towards the source of the voice and hit him with the sword, and because of my perplexity, I could not kill him. He cried loudly, and I came out of the house and waited for a while, and then went to him again and said, 'What is this voice, O Abu Rafi`?' He said, 'Woe to your mother! A man in my house has hit me with a sword! I again hit him severely but I did not kill him. Then I drove the point of the sword into his belly (and pressed it through) till it touched his back, and I realized that I have killed him. I then opened the doors one by one till I reached the staircase, and thinking that I had reached the ground, I stepped out and fell down and got my leg broken in a moonlit night. I tied my leg with a turban and proceeded on till I sat at the gate, and said, 'I will not go out tonight till I know that I have killed him.' So, when (early in the morning) the cock crowed, the announcer of the casualty stood on the wall saying, 'I announce the death of Abu Rafi`, the merchant of Hijaz. Thereupon I went to my companions and said, 'Let us save ourselves, for Allah has killed Abu Rafi`,' So I (along with my companions proceeded and) went to the Prophet (ﷺ) and described the whole story to him. "He said, 'Stretch out your (broken) leg. I stretched it out and he rubbed it and it became All right as if I had never had any ailment whatsoever."