পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা

৩৯৭০-[১১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কার কাফিরগণ যখন বদরে তাদের বন্দীদের মুক্তির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট মুক্তিপণ পাঠাল, তখন (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা) যায়নাব (রাঃ) তার স্বামী আবুল ’আস-এর মুক্তির জন্যও কিছু মাল পাঠালেন। তন্মধ্যে একটি হার ছিল যার মালিক ছিলেন খাদীজাহ্ (রাঃ)। আবুল ’আস-এর সাথে যায়নাব-এর বিয়ের সময় বিবি খাদীজাহ্ উপহার স্বরূপ হারটি যায়নাব (রাঃ)-কে দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারটি দেখে (বিবি খাদীজার স্মৃতিচারণে) অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন এবং সাহাবীগণকে বললেন, যদি তোমরা সমীচীন মনে কর তাহলে যায়নাবের কয়েদি (আবুল ’আস)-কে ছেড়ে দাও এবং যায়নাব যে সমস্ত ধন-সম্পদ পাঠিয়েছে তাও তাকে ফেরত দিয়ে দাও। এতে সাহাবীগণ সম্মতি প্রকাশ করলে, আবুল ’আস মুক্ত হয়ে গেল।

অবশ্য তাকে মুক্তি দেয়ার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট হতে এ অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, যায়নাবকে মদীনায় তাঁর নিকট আসার পথে যেন বাধা সৃষ্টি না করে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়দ ইবনু হারিসাহ্ ও একজন আনসারীকে মক্কায় পাঠালেন এবং তাদেরকে বলে দিলেন, তোমরা মক্কার অনতিদূরে (প্রায় আট কিলোমিটার দূরে তান্’ঈম-এর নিকটবর্তী) ’’ইয়া’জাজ’’ নামক স্থানে অবস্থান করবে। যায়নাব সে পর্যন্ত এসে পৌঁছলে তোমরা উভয়ে তার সঙ্গী হবে এবং তাকে মদীনায় নিয়ে আসবে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ)[1]

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: لَمَّا بَعَثَ أَهْلُ مَكَّةَ فِي فِدَاءِ أُسَرَائِهِمْ بَعَثَتْ زَيْنَبُ فِي فِدَاءِ أَبِي الْعَاصِ بِمَالٍ وَبَعَثَتْ فِيهِ بِقِلَادَةٍ لَهَا كَانَتْ عِنْدَ خَدِيجَةَ أَدْخَلَتْهَا بِهَا عَلَى أَبِي الْعَاصِ فَلَمَّا رَآهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَقَّ لَهَا رِقَّةً شَدِيدَةً وَقَالَ: «إِنْ رَأَيْتُمْ أَنْ تُطْلِقُوا لَهَا أَسِيرَهَا وَتَرُدُّوا عَلَيْهَا الَّذِي لَهَا» فَقَالُوا: نَعَمْ وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ عَلَيْهِ أَنْ يُخَلِّيَ سَبِيلَ زَيْنَبَ إِلَيْهِ وَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَيْدَ بْنَ حَارِثَةَ وَرَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ: «كونا ببطنِ يأحج حَتَّى تَمُرَّ بِكُمَا زَيْنَبُ فَتَصْحَبَاهَا حَتَّى تَأْتِيَا بهَا» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد

عن عاىشة رضي الله عنها قالت لما بعث اهل مكة في فداء اسراىهم بعثت زينب في فداء ابي العاص بمال وبعثت فيه بقلادة لها كانت عند خديجة ادخلتها بها على ابي العاص فلما راها رسول الله صلى الله عليه وسلم رق لها رقة شديدة وقال ان رايتم ان تطلقوا لها اسيرها وتردوا عليها الذي لها فقالوا نعم وكان النبي صلى الله عليه وسلم اخذ عليه ان يخلي سبيل زينب اليه وبعث رسول الله صلى الله عليه وسلم زيد بن حارثة ورجلا من الانصار فقال كونا ببطن ياحج حتى تمر بكما زينب فتصحباها حتى تاتيا بها رواه احمد وابو داود

ব্যাখ্যা: (لَمَّا بَعَثَ أَهْلُ مَكَّةَ فِىْ فِدَاءِ أُسَرَائِهِمْ) অর্থাৎ- বদরের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাদের ওপর বিজয় লাভ করলেন, অতঃপর তাদের কতককে হত্যা করলেন এবং কতককে বন্দী করলেন, আর তাদের থেকে মুক্তিপণ দাবী করলেন।

(رَقَّ لَهَا رِقَّةً شَدِيْدَةً) অর্থাৎ- যায়নাব-এর দূরত্ব ও একাকীত্বের কারণে তার প্রতি সদয় হলেন। খাদীজার যুগ ও তার সঙ্গীর কথা স্মরণ করলেন, কেননা হারটি খাদীজার গলায় ছিল।

(وَكَانَ النَّبِىُّ ﷺ أَخَذَ عَلَيْهِ أَنْ يُخَلِّىَ سَبِيلَ زَيْنَبَ إِلَيْهِ) অর্থাৎ- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবুল ‘আস-এর কাছ থেকে যায়নাব-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পাঠাতে এবং মদীনাতে হিজরত করার ব্যাপারে তাকে অনুমতি দিতে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন। কাযী বলেনঃ যায়নাব ছিল আবুল ‘আস-এর অধীনে, নবূওয়াতের পূর্বে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব-কে আবুল ‘আস-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন।

(بِبَطْنِ يَأْجَجَ) তান্‘ঈম-এর কাছাকাছি একটি স্থান। একমতে বলা হয়েছে, মসজিদে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর সামনে একটি স্থান। কাযী বলেনঃ হারাম অঞ্চলের আশ-পাশের উপত্যকাসমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি উপত্যকা। আর উপত্যকা বলতে জমিনের নীচ স্থান। সীবাওয়াইহি বলেনঃ এটি মক্কার একটি স্থান।

(فَتَصْحَبَاهَا حَتّٰى تَأْتِيَا بهَا) অর্থাৎ- তাকে মদীনাতে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে। আশরাফ বলেনঃ অত্র হাদীসে প্রমাণ আছে- কোনো মুক্তিপণ গ্রহণ ছাড়াই বন্দীর প্রতি দয়া করা বৈধ। আর ঐ ব্যাপারে প্রমাণ আছে যে, ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে গায়র মাহরাম মহিলার সাথে পথে দুই বা ততোধিক পুরুষ প্রেরণ করার অধিকার ইমামে আ‘যামের আছে। কারী বলেনঃ আমি বলব, মহিলার সাথে মাহরাম পুরুষ থাকা অথবা নির্ভরযোগ্য মহিলা থাকা বৈধ হওয়ার কারণে দলীল গ্রহণের বিষয়টি বিতর্কিত। আর এটা মাহরাম ছাড়া সফর করা নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্বের ঘটনা।

ইসাবাহ্ গ্রন্থে আছে, আবুল ‘আস হলো- রবী‘ বিন ‘আবদুল ‘উয্যা বিন ‘আব্দ শামস্ বিন ‘আব্দ মানাফ। তার মা হালাহ্ বিনতু খুওয়াইলিদ। আল্লাহর রসূলের কন্যা যায়নাব ছিল আবুল ‘আস বিন রবী‘-এর অধীনে। অতঃপর তিনি হিজরত করলেন আর আবুল ‘আস তার দীনের উপর থেকে গেল। ঐকমত্য পোষণ করা হয়েছে যে, আবুল ‘আস ব্যবসার উদ্দেশে শামের দিকে বের হলো, অতঃপর যখন সে মদীনার নিকটবর্তী হলো তখন কতিপয় মুসলিম তার দিকে বেরিয়ে যেতে, অতঃপর তার সাথে যা আছে তা গ্রহণ করতে এবং তাকে হত্যা করতে ইচ্ছা করল। অতঃপর এ সংবাদ যায়নাব-এর কাছে পৌঁছলে যায়নাব বলল, হে আল্লাহর রসূল! মুসলিম অঙ্গীকার কি এক অঙ্গীকার নয়? আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তখন যায়নাব বললেন, আমি সাক্ষ্য দিলাম যে, আমি আবুল ‘আসকে আশ্রয় দিয়েছি। অতঃপর আল্লাহর রসূলের সাহাবীগণ তার কাছে গিয়ে তাকে বলল, হে আবুল ‘আস! তুমি কুরায়শ বংশের সম্মানিত স্থানে অবস্থান করছ, তুমি আল্লাহর রসূলের চাচাতো ভাই এখন তোমার কি ইসলাম গ্রহণের চিন্তা-ভাবনা আছে? ইসলাম গ্রহণ করলে তুমি মক্কাবাসীদের সম্পদ থেকে তোমার সাথে যা আছে তুমি তা গনীমাত হিসেবে লাভ করবে। আবুল ‘আস বলল, তোমরা যে ব্যাপারে আমাকে আদেশ করছ তা কতই না নিকৃষ্ট, তুচ্ছ বস্তুর কারণে আমার দীনকে বর্জন করতে, এ বলে আবুল ‘আস চলতে থাকল। পরিশেষে মক্কাতে আগমন করে প্রত্যেক অধিকারীর কাছে তার অধিকার পৌঁছিয়ে দিল। অতঃপর দাঁড়িয়ে বলল, হে মক্কাবাসী! আমি কি আমার দায়িত্ব পূর্ণ করেছি। তারা বলল, হে আল্লাহর রসূল! হ্যাঁ। তখন আবুল ‘আস বলল, নিঃসন্দেহে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ‘ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য কেউ নেই, আর মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল! অতঃপর তিনি হিজরত করে মদীনায় আগমন করলে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম বিবাহ অনুযায়ী যায়নাব-কে তার কাছে ফিরিয়ে দিলেন (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা

৩৯৭১-[১২] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর যুদ্ধে যখন কুরায়শদেরকে বন্দী করলেন, তখন ’উকবা ইবনু আবূ মু’আয়ত্ব ও নযর ইবনু হারিস-কে হত্যা করেন। আর আবূ ’আয্যাতুল জুমাহী-কে মুক্তিপণ ব্যতীত এমনিই ছেড়ে দেন। (শারহুস্ সুন্নাহ্, শাফি’ঈ, ইবনু ইসহক-এর ’সীরাত’ গ্রন্থে)[1]

وَعَنْهَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا أَسَرَ أَهْلَ بَدْرٍ قَتَلَ عُقْبَةَ بْنَ أَبِي مُعَيْطٍ وَالنَّضْرَ بْنَ الْحَارِثِ وَمَنَّ عَلَى أَبِي عَزَّةَ الْجُمَحِيِّ. رَوَاهُ فِي شَرْحِ السّنة وَالشَّافِعِيّ وَابْن إِسْحَاق فِي «السِّيرَة»

وعنها ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لما اسر اهل بدر قتل عقبة بن ابي معيط والنضر بن الحارث ومن على ابي عزة الجمحي رواه في شرح السنة والشافعي وابن اسحاق في السيرة

ব্যাখ্যা: (قَتَلَ عُقْبَةَ بْنَ أَبِىْ مُعَيْطٍ وَالنَّضْرَ بْنَ الْحَارِثِ) হিদায়াতে আছে- বন্দীদের ক্ষেত্রে ইমামের ইখতিয়ার আছে- চাইলে তাদেরকে হত্যা করবে। ইবনুল হুমাম বলেনঃ যখন তারা ইসলাম গ্রহণ করবে না, যেহেতু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বন্দী হত্যা করেছেন, তাই ‘উকবা বিন আবূ মু‘আয়ত এবং অন্যান্যকে তাঁর হত্যাকরণে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা তাদের হত্যাকরণের মাধ্যমে তাদের থেকে সংঘটিত বিশৃঙ্খলার মূলোৎপাটিত হয়েছে। আর যদি চান তাহলে তাদেরকে দাস বানাবেন। কেননা এতে মুসলিমদের কল্যাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের অকল্যাণ প্রতিহতকরণ রয়েছে।

এজন্যই আমরা বলেছি, কোনো যোদ্ধার জন্য কোনো বন্দীকে নিজে নিজে হত্যা করার অধিকার নেই। কেননা এ ক্ষেত্রে সিন্ধান্ত গ্রহণ করার অধিকার ইমামের। তিনি যদি চান তাহলে তাদেরকে মুসলিমদের নিরাপত্তা স্বরূপ স্বাধীন অবস্থায় ছেড়ে দিবে। ‘উমার বড় দলের ক্ষেত্রে এটা করেছেন, তবে ‘আরবের মুশরিক এবং মুরতাদ যখন বন্দী হয় তখন তাদের বিষয় আলাদা। কেননা তাদের থেকে কোনো ট্যাক্স গ্রহণ করা হবে না এবং তাদেরকে দাস বানানো বৈধ হবে না। বরং হয় ইসলাম গ্রহণ, নতুবা তরবারি। অতঃপর বন্দীরা যদি বন্দীত্বের পর ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে আমরা তাদেরকে হত্যা করব না। তবে তাদেরকে দাস বানানো বৈধ। তবে যদি গ্রেপ্তারের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করে থাকে তবে ভিন্ন কথা, তখন তাদেরকে দাস বানানো যাবে না, তারা স্বাধীনে পরিণত হবে। কেননা এটা তাদের মাঝে মালিকত্বের কারণ সংঘটিত হওয়ার পূর্বে ইসলাম গ্রহণ।

(وَمَنَّ عَلٰى اَبِىْ عَزَّةَ الْجُمَحِىىِّ) অর্থাৎ- মুক্তিদানের মাধ্যমে আবূ আয্যা আল জুমাহী-কে অনুগ্রহ করলেন। মিরকাতে বিগত হয়েছে, এ হুকুম রহিত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা

৩৯৭২-[১৩] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ’উকবা ইবনু আবূ মু’আয়ত্ব-কে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন তখন সে বলে উঠল, (আমাকে হত্যা করা হলে) আমার ছোট ছোট সন্তান-সন্ততিদের কি উপায় হবে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আগুন। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا أَرَادَ قَتْلَ عُقْبَةَ بْنَ أَبِي مُعَيْطٍ قَالَ: مَنْ لِلصِّبْيَةِ؟ قَالَ: «النَّار» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن ابن مسعود ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لما اراد قتل عقبة بن ابي معيط قال من للصبية قال النار رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: (مَنْ لِلصِّبْيَةِ؟) অর্থাৎ- ‘‘আমার বাচ্চাদের দায়িত্ব কে নিবে?’’ তাদের লালন-পালন ও ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কে নিবে? অথচ তুমি তাদের দায়িত্বশীলকে হত্যা করছ।

قَالَ : النَّارُ দু’টি উদ্দেশের সম্ভাবনা রাখছে। ১. আগুন যদি জমিন হওয়ার উপযোগী হয় তাহলে তাই। ২. বিজ্ঞপদ্বতিতে উত্তর প্রদান, অর্থাৎ- তোমার জন্য আগুন। অর্থাৎ- তুমি তোমার নিজের বিষয়ে গুরুত্ব দাও এবং আগুন থেকে তোমার জন্য যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেজন্য গুরুত্ব দাও। সন্তানদের বিষয়ে চিন্তা পরিত্যাগ কর, কেননা তাদের দায়িত্বশীল ঐ আল্লাহ যার ওপর আছে জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিযক্বের দায়িত্ব। এটাই এখানে উদ্দেশ্য। একে ত্বীবী বর্ণনা করেছেন। তবে সর্বাধিক প্রকাশমান হলো- প্রথমটিই লক্ষ্য। কেননা এ দ্বিতীয় অর্থটি যদি উদ্দেশ্য করা হত তাহলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবশ্যই বলতেন, আল্লাহ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা

৩৯৭৩-[১৪] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল (আঃ) এসে আমাকে বললেন, আপনার সাহাবীগণকে (বদরের বন্দীদের ব্যাপারে) এ অধিকার দিয়ে দিন, তারা ইচ্ছা করলে বন্দীদেরকে হত্যা করতে পারবে, আর যদি মুক্তিপণ স্বরূপ ধন-সম্পদের বিনিময়ে তাদেরকে ছেড়ে দিতে চায়, তাও পারবে। কিন্তু মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিলে, আগামীতে কাফিরদের সমপরিমাণ (৭০ জন) নিজেদের মধ্য হতে শহীদ হবে। অতঃপর সাহাবীগণ বললেন, মুক্তিপণ আমরা গ্রহণ করলাম এবং আমাদের মধ্য হতে (আগামীতে সমপরিমাণ) শহীদ হবে। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّ جِبْرِيلَ هَبَطَ عَلَيْهِ فَقَالَ لَهُ: خَيِّرْهُمْ يَعْنِي أَصْحَابَكَ فِي أُسارى بدر: القتلَ والفداءَ عَلَى أَنْ يُقْتَلَ مِنْهُمْ قَابِلًا مِثْلُهُمْ قَالُوا الْفِدَاءَ وَيُقْتَلَ مِنَّا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيث غَرِيب

وعن علي رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ان جبريل هبط عليه فقال له خيرهم يعني اصحابك في اسارى بدر القتل والفداء على ان يقتل منهم قابلا مثلهم قالوا الفداء ويقتل منا رواه الترمذي وقال هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: (اَلْقَتْلَ وَالْفِدَاء) অর্থাৎ- তোমরা বন্দীদেরকে হত্যাও করতে পার অথবা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়েও দিতে পার। অর্থাৎ (قَابِلًا) অর্থাৎ- আগত আগামী বছরে আর আগামী বছর বলতে যে বছরে উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। (مِثْلُهُمْ) অর্থাৎ- কাফিরদের থেকে যে সংখ্যা মুক্তি দেয়া হবে, তত সংখ্যায় আগামী যুদ্ধে মুসলিমদের মধ্য হতে শহীদ হবে আর পূর্বে  বদর যুদ্ধে কাফিরদের সত্তরজনকে হত্যা এবং সত্তরজনকে বন্দী করা হয়েছিল।

(وَيُقْتَلَ مِنَّا) অর্থাৎ- আগামী বছর আমাদের থেকে তাদের অনুরূপ হত্যা করা হবে। অর্থাৎ- আমাদের পছন্দ হলো- তাদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করা, আর আমাদের মধ্য হতে কতক নিহত (শহীদ) হওয়া। অতঃপর মুসলিমরা বদরের দিন কাফিরদের থেকে যতজনকে মুক্তি দিয়েছিল উহুদের দিন মুসলিমদের থেকে সে পরিমাণ হত্যা করা হয়। আর বদরের দিন কাফিরদের সত্তরজনকে হত্যা করা হয় এবং সত্তরজনকে বন্দী করা হয়।

মুসলিম এবং তিরমিযী ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ‘উমার থেকে বর্ণনা করেন যে, তারা বদরের দিন যখন বন্দীদেরকে বন্দী করল, তখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর ও ‘উমার -কে বললেন, ‘‘তোমরা এ সকল বন্দীদের ব্যাপারে কী অভিমত পেশ কর?’’ তখন আবূ বাকর বললেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এরা চাচাতো ভাই এবং নিকটত্মীয়! আমি তাদের থেকে আপনার কর্তৃক মুক্তিপণ গ্রহণের বিষয়টি ভাবছি, ফলে তা কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষে শক্তি স্বরূপ হবে। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের তাওফীক দিবেন, এ আশা করা যায়। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে খত্ত্বাব-এর ছেলে! আপনি কী ভাবছেন? আমি বললাম, না, আল্লাহর শপথ! হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আবূ বাকর যা ভেবেছে আমি তা ভাবিনি। তবে আপনি আমাদেরকে সুযোগ দিবেন, এ কথা ভাবছি যাতে তাদের গর্দান উড়িয়ে দিতে পারি। কেননা এরা কুফরীর মূল নেতা। অতঃপর আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর যা বলেছেন তা ইচ্ছা করলেন, আমি যা বলেছি তা ইচ্ছা করেননি। এদের হত্যা করা হলে কুফ্র নির্মূল হবে। যখন পরবর্তী দিন আসলো তখন আমি দেখলাম আবূ বাকর এবং আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে কাঁদছেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে সংবাদ দিন কোন্ জিনিসের কারণে আপনি এবং আপনার সাথী কাঁদছেন? তখন উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি ঐ জন্য কাঁদছি যা তোমার সাথীবর্গের সম্মুখীন হয়েছে বন্দীদের থেকে তারা মুক্তিপণ গ্রহণ করার কারণে। তারা ঐ বৃক্ষটি অপেক্ষা অতি নিকটে তাদের শাস্তির সম্মুখীন হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা আয়াতটির শেষ পর্যন্ত অবতীর্ণ করেন।

বায়যাভী বলেনঃ আয়াতটি ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহনকারী যে, নাবীগণ মুজতাহিদ, কখনো তাদের ভুল হয়ে থাকে তবে ভুলের উপর তারা স্থির থাকেন না। আল্লাহ তা‘আলার বাণী, ‘‘আল্লাহর তরফ থেকে যদি কোনো সিদ্ধান্ত গত না হতো’’- (সূরা আল আনফাল ৮ : ৬৮), অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলার তরফ থেকে যদি লাওহে মাহফূযে কোনো সিদ্ধান্তের প্রমাণ গত না হতো, আর তা হলো ইজতিহাদের ক্ষেত্রে ভুলকারীকে শাস্তি না দেয়া, অথবা বদরের যোদ্ধাদেরকে শাস্তি না দেয়া, অথবা এমন সম্প্রদায়কে যাদের নিকটে এ সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, অথবা যে মুক্তিপণ তারা গ্রহণ করেছে তা অচিরেই তাদের জন্য হালাল হয়ে যাবে। আয়াতে ব্যবহৃত لَمَسَّكُمْ অর্থ- তোমরা যে মুক্তিপণ গ্রহণ করেছ সে কারণে তোমাদেরকে মহাশাস্তি গ্রাস করত। আয়াত ও হাদীসের মাঝে সমন্বয় সাধনে এ বলাও সম্ভব যে, প্রথমত বন্দীদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করার ঐচ্ছিকতা সাধারণভাবে স্বীকৃত ছিল। অতঃপর পরবর্তীতে তা শর্তসাপেক্ষে ঐচ্ছিকতায় পরিণত হয়। [আল্লাহ সর্বজ্ঞাত] (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৬৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা

৩৯৭৪-[১৫] ’আত্বিয়্যাতুল কুরাযী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমিও বানী কুরায়যার বন্দীদের মধ্যে ছিলাম। আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে উপস্থিত করা হলো। সাহাবীগণ বন্দীদের সতর খুলে দেখেন। যার গুপ্তাঙ্গের লোম উঠেছে তাকে হত্যা করা হয়, আর যার লোম প্রকাশ পায়নি তাকে হত্যা করা হয়নি। ফলে তাঁরা আমার সতর খুলে দেখলেন যে, আমার গুপ্তাঙ্গের লোম উঠেনি। তাই আমাকে হত্যা না করে বন্দীদের মধ্যে রেখে দিলেন। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[1]

عَن عَطِيَّة القَرظِي قَالَ: كنتُ فِي سَبي قُرَيْظَةَ عُرِضْنَا عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَانُوا يَنْظُرُونَ فَمَنْ أَنْبَتَ الشَّعَرَ قُتِلَ وَمَنْ لَمْ يُنْبِتْ لَمْ يُقْتَلْ فَكَشَفُوا عَانَتِي فَوَجَدُوهَا لَمْ تُنْبِتْ فَجَعَلُونِي فِي السَّبْيِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه. والدارمي

عن عطية القرظي قال كنت في سبي قريظة عرضنا على النبي صلى الله عليه وسلم فكانوا ينظرون فمن انبت الشعر قتل ومن لم ينبت لم يقتل فكشفوا عانتي فوجدوها لم تنبت فجعلوني في السبي رواه ابو داود وابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: (فَمَنْ أَنْبَتَ الشَّعَرَ قُتِلَ) অর্থাৎ- যার নাভির নীচে চুল গজিয়েছে তাকে হত্যা করা হয়েছে, কেননা নাভির নীচে চুল গজানো প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আলামাত। সুতরাং সে যোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

(وَمَنْ لَمْ يُنْبِتْ لَمْ يُقْتَلْ) কেননা এ ধরনের মানুষ শিশুদের অন্তর্ভুক্ত। এ অর্থটি তাদের কাছে সংশয়পূর্ণ হচ্ছে যারা মুসলিম এবং কাফিরদের মাঝে পার্থক্য করে থাকে আর এটা ঐ সময় যখন নাভীর নীচে চুল গজানোকে কাফিরদের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে নির্ধারণ করে থাকে আর মুসলিমদের ক্ষেত্রে তা বিবেচনা করা হয় না। কারণ কাফিরদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া বয়সের দৃষ্টিকোণ থেকে জানা যায় না, আর তাদের কথাও গ্রহণ করা সম্ভব নয়, কেননা তারা নিজেদের থেকে হত্যার বিধান প্রতিহত করার উদ্দেশে ঐ ব্যাপারে তারা মিথ্যা বলবে। আর এজন্যই তাদের সংবাদ গ্রহণযোগ্য নয়। পক্ষান্তরে মুসলিম এবং তাদের সন্তানদের বয়সের পরিমাণ সম্পর্কে জানা সম্ভব, কেননা তাদের জন্মের সময় সংরক্ষিত। তাদের জন্মের সময়ের তারিখ দেয়া আছে, জানা আছে। এ ব্যাপারে তাদের সংবাদ গ্রহণযোগ্য। এ কারণেই মুশরিকদের ক্ষেত্রে চুল গজানোকে বিবেচনা করা হয়েছে। [আল্লাহ সর্বাধিক জ্ঞাত] এ উক্তিটি খত্ত্বাবীর।

তূরিবিশ্তী বলেনঃ কেবল মুশরিকদের ক্ষেত্রে নাভীর নীচে চুল গজানোকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার জন্য বিবেচনা করা হয়েছে এটা মূলত জরুরী হিসেবে। এমতাস্থায় যদি কাফিরদেরকে তাদের বয়সের পরিমাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় তাহলে তারা সত্য বলবে না, কেননা এতে তারা ধ্বংস দেখছে। (আওনুল মা‘বূদ ৯ম খন্ড, হাঃ ৪৩৯৫; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৮৪; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা

৩৯৭৫-[১৬] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার দিন সন্ধিচুক্তি হওয়ার পূর্বে কুরায়শদের কিছুসংখ্যক গোলাম মক্কা হতে মদীনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে চলে আসলো। পরে তাদের মালিকেরা তাঁর (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) নিকট লিখে পাঠাল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহর কসম! তারা তোমার দীনের (ধর্মের) প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়নি; বরং তারা দাসত্বের শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে মুক্তি প্রাপ্তির উদ্দেশে আমাদের নিকট হতে পালিয়েছে। কয়েকজন সাহাবীও (অনুরূপ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! তাদের মালিকেরা সত্যই বলেছে, কাজেই তাদেরকে তাদের মালিকের নিকট ফেরত পাঠিয়ে দিন। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হয়ে বললেন, হে কুরায়শগণ! আমি লক্ষ্য করছি, তোমরা তোমাদের আভিজাত্যের অহমিকা তথা গোঁড়ামি এখনও ছাড়নি, যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ তা’আলা তোমাদের এই গোঁড়ামির দরুন ঘাড়ে আঘাত হানার জন্য কাউকে পাঠাবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তা ছাড়বেও না। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গোলামদেরকে ফেরত পাঠাতে স্পষ্ট ভাষায় অস্বীকৃতি জানিয়ে ঘোষণা দিলেন, তারা সকলেই আল্লাহর মুক্তকৃত বান্দা। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: خَرَجَ عِبْدَانٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْنِي الْحُدَيْبِيَةَ قَبْلَ الصُّلْحِ فَكَتَبَ إِلَيْهِ مَوَالِيهِمْ قَالُوا: يَا مُحَمَّدُ وَاللَّهِ مَا خَرَجُوا إِلَيْكَ رَغْبَةً فِي دِينِكَ وَإِنَّمَا خَرَجُوا هَرَبًا مِنَ الرِّقِّ. فَقَالَ نَاسٌ: صَدَقُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ رُدَّهُمْ إِلَيْهِمْ فَغَضِبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: «مَا أَرَاكُم تنتهونَ يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ حَتَّى يَبْعَثَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ مَنْ يَضْرِبُ رِقَابَكُمْ عَلَى هَذَا» . وَأَبَى أَنْ يَرُدَّهُمْ وَقَالَ: «هُمْ عُتَقَاءَ اللَّهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن علي رضي الله عنه قال خرج عبدان الى رسول الله صلى الله عليه وسلم يعني الحديبية قبل الصلح فكتب اليه مواليهم قالوا يا محمد والله ما خرجوا اليك رغبة في دينك وانما خرجوا هربا من الرق فقال ناس صدقوا يا رسول الله ردهم اليهم فغضب رسول الله صلى الله عليه وسلم وقال ما اراكم تنتهون يا معشر قريش حتى يبعث الله عليكم من يضرب رقابكم على هذا وابى ان يردهم وقال هم عتقاء الله رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: (فَغَضِبَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ) তূরিবিশ্তী বলেনঃ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল এ কারণে রাগ করেছেন যে, তারা তাদের ব্যাপারে ধারণার বশবর্তী হয়ে শারী‘আতের হুকুমের বিরোধিতা করেছে এবং তারা তাদের মুশরিক বন্ধুদের দাবী অনুপাতে মুশরিক বন্ধুদের প্রতি সাক্ষ্য দিয়েছে যে, তারা দাসত্ব থেকে পলায়নের উদ্দেশে মক্কা থেকে বেরিয়ে এসেছে, ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয়ে নয়। তাদের মাঝে শারী‘আতের হুকুম ছিল, তারা ইসলামের রজ্জুতে আশ্রয় নিয়ে কাফির দেশ হতে বের হওয়ার দ্বারা স্বাধীনে পরিণত হয়েছে, তাদেরকে কাফিরদের কাছে ফেরত দেয়া বৈধ হবে না। তাদের বন্ধুদের প্রতি তাদের সাহায্য করা যেন শত্রুদের পক্ষে সাহায্য করা।

(مَا أَرَاكُمْ تَنْتَهُوْنَ يَا مَعْشَرَ! قُرَيْشٍ) ত্বীবী বলেনঃ এতে বিরাট ধমক রয়েছে যেমন তাদের বিরত থাকা সম্পর্কে অবগতিকে অস্বীকার করেছেন এবং তাদের বিরত না হওয়ার স্থায়িত্বকে উদ্দেশ্য করেছেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৯৭; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে