পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৪৬-[৬] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুই ভিন্নধর্মের লোক একে অপরের ওয়ারিস হয় না। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَتَوَارَثُ أَهْلُ مِلَّتَيْنِ شَتَّى» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْن مَاجَه

عن عبد الله بن عمرو قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا يتوارث اهل ملتين شتى» . رواه ابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: পরস্পর ভিন্ন ধর্মী দু’টি গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় একজন অপরজন থেকে উত্তরাধিকারী সূত্রে সম্পদ লাভ করে না। তথা মৃত ব্যক্তি এবং তার ওয়ারিসদের মাঝে দু’জন দু’ ধর্মের হলে একে অপরের সম্পদে ওয়ারিস হবে না। পরস্পর ভিন্নধর্মী দ্বারা কি উদ্দেশ্য তা নিয়ে ফাকীহদের মাঝে মতভেদ রয়েছে-

ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেন, ধর্মের ভিন্নতা মানে- পরস্পর কুফরী ধর্মের হলে। তথা একজন ইয়াহূদী অপরজন খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী বা একজন অগ্নিপূজক অপরজন মূর্তিপূজক ইত্যাদি। এক কথায় যদি পরস্পরে ভিন্নধর্মী হয় কুফরী ধর্মের ক্ষেত্রে তাহলে একজন অপরজনকে ওয়ারিস বানাবে না।

ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন। অধিকাংশ ফাকীহ ও ‘আলিম বলেছেন, ধর্মের মাঝে ভিন্নতা মানে ‘‘একজনে ইসলাম ধর্মের অনুসারী আর অপরজন কুফরী ধর্মের অনুসারী’’ তথা পরস্পরে ইসলাম ধর্ম এবং কুফরী ধর্মের মাঝে ভিন্ন হলে একে অপরকে ওয়ারিস বানাবে না। এক্ষেত্রে সকল কুফরী ধর্ম ‘‘এক’’। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «الْكَفَرَةَ كُلَّهُمْ مِلَّةٌ وَاحِدَةٌ» সকল কাফির একটি গোষ্ঠী। (কুফরীর দিক থেকে)। সুতরাং ইসলামের বিপরীতে রয়েছে কুফরী ধর্ম (ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান, অগ্নিপূজক ইত্যাদি সবই কুফরী)। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৯০৮; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২১০৮; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৪৭-[৭] আর ইমাম তিরমিযী (রহঃ) জাবির হতে বর্ণনা করেছেন।[1]

وَرَوَاهُ التِّرْمِذِيّ عَن جَابر

ورواه الترمذي عن جابر

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৪৮-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হত্যাকারী (নিহতের) উত্তরাধিকার হয় না। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْقَاتِلُ لَا يَرِثُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «القاتل لا يرث» . رواه الترمذي وابن ماجه

ব্যাখ্যা : ইমাম ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে হত্যার দ্বারা হত্যাকারীর কিসাস অথবা কাফফারা ওয়াজিব হয়। ঐ ধরনের হত্যাকারী হত্যাকৃত ব্যক্তি থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ লাভ করবে না।

‘আল্লামা মুযহির বলেনঃ এ হাদীসের ভিত্তিতে ইচ্ছাকৃত হত্যা ও ভুলক্রমে হত্যা, এমনকি পাগল এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির হত্যার হুকুম একই।

ইমাম মালিক (রহঃ) বলেনঃ যদি হত্যাকারী ভুলবশতঃ কাউকে হত্যা করে তাহলে উত্তরাধিকারী সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে না।

ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেনঃ হত্যাকারী যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক বা পাগল হয় তাহলে তারা উত্তরাধিকারী সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে না। কেননা তাদের ওপর শারী‘আতের বিধান প্রযোজ্য হয় না।

শারহেল ফারায়িযে ‘আল্লামা সাইয়্যিদ শারীফ বলেছেনঃ হত্যাকারী মীরাস থেকে তখনই বঞ্চিত হবে যখন সে না হক হত্যা করবে। কিন্তু কেউ যদি কাউকে কিসাস অথবা হাদ্দ কায়িম করতে গিয়ে অথবা কারো আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে হত্যা করে তাহলে সে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। অনুরূপ ন্যায়বিচারক শাসক বিদ্রোহী হত্যা করলে সে তার উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২১০৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৪৯-[৯] বুরায়দাহ্ ইবনু হুসায়ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাদী ও নানীর জন্য এক-ষষ্ঠাংশ নির্ধারণ করেছেন, যদি তাদের সাথে (মৃতের) মা না থাকে। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ بُرَيْدَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَعَلَ لِلْجَدَّةِ السُّدُسَ إِذَا لَمْ تَكُنْ دونهَا أم. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن بريدة: ان النبي صلى الله عليه وسلم جعل للجدة السدس اذا لم تكن دونها ام. رواه ابو داود

ব্যাখ্যা : যদি মৃত ব্যক্তির মা জীবিত না থাকে তাহলে ঐ মৃত ব্যক্তির দাদী এবং নানী মৃত ব্যক্তির সম্পদ থেকে এক-ষষ্ঠাংশের মালিক হবে। আর যদি মৃত ব্যক্তির মা জীবিত থাকে তাহলে মৃত ব্যক্তির দাদী এবং নানী কেউই উত্তরাধিকার সূত্রে মৃত ব্যক্তির সম্পদে মালিক হবে না। কিন্তু যদি মৃত ব্যক্তির পিতা জীবিত থাকে তাহলে শুধুমাত্র দাদী বঞ্চিত হবে। তবে দাদী এক বা একাধিক যতই হোক না কেন তারা সবাই এক ষষ্ঠাংশের মালিক হবে এবং একাধিক দাদীর উপস্থিতিতে তা সমভাবে বণ্টিত হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৮৯২; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৫০-[১০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সন্তান যখন ভূমিষ্ঠ হয়ে চিৎকার করে, তার (মৃত্যুতে) জানাযা আদায় করতে হবে এবং সে ওয়ারিস হবে। (ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا اسْتَهَلَّ الصَّبِيُّ صُلِّيَ عَلَيْهِ وَورث» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه والدارمي

وعن جابر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا استهل الصبي صلي عليه وورث» . رواه ابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: যদি কোনো নবজাতক শিশু জন্মগ্রহণের পর স্বর উচুঁ করে তথা হাঁচি, শ্বাস-প্রশ্বাস বা নড়াচড়ার মাধ্যমে জীবিত প্রমাণ করার পর মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার গোসল ও কাফন কার্য সম্পন্ন করে তাকে সকল মৃত মুসলিমের ন্যায় দাফন করবে, আর সে ওয়ারিস হিসেবে উত্তরাধিকার সম্পদ লাভ করবে এবং তার থেকেও অন্যরা ওয়ারিস হবে।
শারহুস্ সুন্নাহে বর্ণিত আছে- যদি কোনো লোক মৃত্যুবরণ করে, এমতাবস্থায় তার কোনো সন্তান গর্ভে থাকে, তাহলে গর্ভস্থিত সন্তানের জন্যে সম্পদ বরাদ্দ রাখবে। যদি সন্তান জীবিতাবস্থায় জন্মগ্রহণ করে তাহলে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ লাভ করবে, অন্যথায় নয়। জীবিতাবস্থায় জন্মগ্রহণ করে চাই আওয়াজ করুক বা না করুক নবজাতক উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ লাভ করবেই। আর এমনটিই বলেছেন ইমাম সাওরী, আওযা‘ঈ, শাফি‘ঈ ও ইমাম আবূ হানীফার শিষ্যবৃন্দ (রহঃ)।

অন্য আরেকদল অবশ্য ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তারা উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণ দিয়েছেন। আর اسْتِهْلَال অর্থ হলো স্বর উঁচু করা। ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেনঃ اسْتِهْلَال প্রমাণিত হবে হাঁচির মাধ্যমে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৫১-[১১] কাসীর ইবনু ’আব্দুল্লাহ (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে, তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো গোত্রের মুক্ত ক্রীতদাস তাদেরই একজন, গোত্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তি তাদেরই একজন এবং গোত্রের ভাগিনেও তাদেরই একজন। (দারিমী)[1]

وَعَنْ كَثِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَوْلَى الْقَوْمِ مِنْهُمْ وَحَلِيفُ الْقَوْمِ مِنْهُمْ وَابْنُ أُخْتِ الْقَوْمِ مِنْهُمْ» . رَوَاهُ الدَّارمِيّ

وعن كثير بن عبد الله عن ابيه عن جده قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «مولى القوم منهم وحليف القوم منهم وابن اخت القوم منهم» . رواه الدارمي

ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসে তিনজন যাবিল আরহাম-এর প্রাপ্ত অংশের ব্যাপারে আলোচিত হয়েছে।

প্রথমতঃ কোনো কওমের আযাদকারী ব্যক্তিই আযাদকৃত গোলামের সম্পদে আসাবা সাবাবিয়্যাহ্ হিসেবে ওয়ারিস হবে। পূর্বে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ কোনো কওমের মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ ব্যক্তিও তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন- পরস্পরে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ নিমেণাক্ত পদ্ধতিতে হওয়া যায়। যেমন: একে অপরকে বলবে ‘‘আমার রক্তই তোমার রক্ত, আমার পোশাকই তোমার পোশাক, আমার চুক্তিই তোমার চুক্তি, আমার যুদ্ধই তোমার যুদ্ধ, আমি তোমার সম্পদে ওয়ারিস হবো, আর তুমি আমার সম্পদে ওয়ারিস হবে।

ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে- মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির ওয়ারিস হবে। তবে শর্ত হলো এমতাবস্থায় মৃত ব্যক্তির জন্যে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কোনো ওয়ারিস না থাকা।

মীরাসের আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ ব্যক্তির জন্য মৃত ব্যক্তির সম্পদ এক-ষষ্ঠাংশ নির্ধারিত ছিল। আর তা ছিল আল্লাহ তা‘আলার এই বাণীর প্রেক্ষক্ষতঃ ‘‘আর তোমাদের যারা মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হয় তাদেরকে তাদের প্রাপ্যাংশ প্রদান কর।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৩৬)

পরবর্তীতে উক্ত বিধানকে রহিত করা হয়েছে আল্লাহ তা‘আলার এই বাণীর প্রেক্ষক্ষতঃ ‘‘আর রক্ত সম্পর্কীয় ব্যক্তিগণ একে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠতর।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৬)

সুতরাং মৃত ব্যক্তির যদি কোনো আসাবা এবং যাবিল আরহাম না থাকে তাহলে এমতাবস্থায় মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ ব্যক্তি ওয়ারিস হবে। ‘আল্লামা বায়যাভী (রহঃ) বলেনঃ ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির হাতে ইসলাম গ্রহণ করে এবং এ মর্মে চুক্তিতে আবদ্ধ হয় যে, তারা একে অপরের পরস্পরের পরিত্যক্ত সম্পদের ওয়ারিস হবে, তবে উক্ত চুক্তি বিশুদ্ধ এবং তারা একে অপরকে ওয়ারিস বানাবে।

তৃতীয়তঃ কোনো কওমের বোনের ছেলে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। পূর্বে এই এর ব্যাখ্যা আলোচিত হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৫২-[১২] মিকদাম ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি প্রত্যেক মু’মিনের জন্যই তার নিজের চেয়েও বেশি ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং যে ঋণ অথবা পোষ্য (সন্তান-সন্ততি) রেখে যাবে তা আমার যিম্মাদারিত্ব হবে; আর যে ধন-সম্পদ রেখে যাবে তা তার ওয়ারিসদের হবে। আমিই অভিভাবক যার অভিভাবক নেই, আমি তার ধন-সম্পদের ওয়ারিস হবো এবং তার বন্দীত্ব মুক্ত করব। (অনুরূপভাবে) মামা তার ওয়ারিস হবে যার কোনো ওয়ারিস নেই, সে তার ধন-সম্পদের ওয়ারিস হবে এবং তার বন্দীত্ব মুক্ত করবে।

অপর বর্ণনায় আছে, আমি তার ওয়ারিস হব যার ওয়ারিস নেই, আমি তার রক্তপণ দেব এবং তার ওয়ারিস হব। মামা তার ওয়ারিস হবে যার ওয়ারিস নেই, সে তার রক্তপণ দেবে ও তার ওয়ারিস হবে। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن الْمِقْدَام قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَا أَوْلَى بِكُلِّ مُؤْمِنٍ مِنْ نَفْسِهِ فَمَنْ تَرَكَ دَيْنًا أَوْ ضَيْعَةً فَإِلَيْنَا وَمَنْ تَرَكَ مَالًا فَلِوَرَثَتِهِ وَأَنَا مَوْلَى مَنْ لَا مَوْلَى لَهُ أَرِثُ مَالَهُ وَأَفُكُّ عَانَهُ وَالْخَالُ وَارِثُ مَنْ لَا وَارِثَ لَهُ يَرِثُ مَالَهُ وَيَفُكُّ عَانَهُ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «وَأَنَا وَارِثُ مَنْ لَا وَارِثَ لَهُ أَعْقِلُ عَنْهُ وَأَرِثُهُ وَالْخَالُ وَارِثُ مَنْ لَا وَارِثَ لَهُ يَعْقِلُ عَنْهُ ويرثه» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن المقدام قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «انا اولى بكل مومن من نفسه فمن ترك دينا او ضيعة فالينا ومن ترك مالا فلورثته وانا مولى من لا مولى له ارث ماله وافك عانه والخال وارث من لا وارث له يرث ماله ويفك عانه» . وفي رواية: «وانا وارث من لا وارث له اعقل عنه وارثه والخال وارث من لا وارث له يعقل عنه ويرثه» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি মু’মিনদের প্রতি জাগতিক ও ধর্মীয় সকল বিষয়ে তাদের নিজেদের থেকে অধিকতর শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। তাদের প্রতি আমার স্নেহ-ভালোবাসা, মায়া-মমতা সকল কিছুর থেকেও অধিকতর।

সুতরাং তাদের কেউ যদি কোনো ঋণ রেখে মারা যায় বা তার পরিবার-পরিজন রেখে মারা যায়, আর ঐ মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করার মতো কেউ না থাকে বা তার কোনো সম্পদ না থাকে এবং তার পরিবার-পরিজনকে দেখাশুনা ও তাদের ভরণ-পোষণের খরচ বহনের কিছুই না থাকে তাহলে মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে ও পরিবারের ভরণ পোষণে আমি নিজেই যিম্মাদার।

আর যে ব্যক্তি কোনো সম্পদ রেখে মৃত্যুবরণ করে তাহলে ঐ সম্পদ মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন ঋণ পরিশোধ ও ওয়াসিয়্যাত পূর্ণ করার পর অবশিষ্ট সম্পদ ওয়ারিসদের মাঝে বণ্টন করবে।

আর কোনো মৃত ব্যক্তির যদি ওয়ারিস না থাকে, তাহলে আমি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেই ঐ মৃত ব্যক্তির সম্পদের ওয়ারিস। ‘আল্লামা কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ মৃত ব্যক্তির সম্পদে ওয়ারিস হবেন যার কোনো ওয়ারিস নেই’’- এ কথার মর্মার্থ হলো ঐ ব্যক্তির সম্পদকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে তথা বায়তুল মালে স্থানান্তরিত করা হবে এবং এটা আল্লাহ ও তার রসূলের জন্য।

অতঃপর যদি হত্যার মতো অপরাধের কারণে মৃত ব্যক্তির ওপরে কাফফারা ওয়াজিব হয়, তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত ব্যক্তির সম্পদ থেকে কাফফারা আদায় করে উক্ত মৃত ব্যক্তিকে দায়মুক্ত করে দেন। আর যদি কোনো ব্যক্তি মারা যায় এমতাবস্থায় মামা ব্যতীত অন্য কোনো ওয়ারিস না থাকে, তাহলে মামা তার বোনের ছেলের সম্পদে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় হওয়ার কারণে ওয়ারিস হবে এবং মৃত ব্যক্তির ওপর যদি হত্যার কাফফারা ওয়াজিব হয় তাহলে সে মৃতের সম্পদ থেকে কাফফারা আদায় করে তাকে মুক্ত করবে।

জ্ঞাতব্য যে, যাবিল আরহাম তথা রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় হলো মৃত ব্যক্তির এমন ওয়ারিস যারা যাবিল ফুরুজ বা নির্ধারিত অংশপ্রাপ্ত ওয়ারিস নয় এবং আসাবাও নয়। সুতরাং যাবিল আরহাম কি মৃত ব্যক্তির সম্পদে ওয়ারিস হবেন- এ নিয়ে সাহাবী এবং তাবি‘ঈদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। ‘উমার, ‘আলী, ইবনু মাস্‘ঊদ, মু‘আয ইবনু জাবালসহ অধিকাংশ সাহাবী ও ‘আলকামাহ্, নাখ‘ঈ, ইবনু সীরীন, ‘আত্বা, মুজাহিদসহ একদল তাবি‘ঈ এবং ইমাম আবূ হানীফাহ্, আবূ ইউসুফ, মুহাম্মাদসহ একদল ফাকীহ মনে করেন যে, ‘‘যাবিল আরহাম’’ উত্তরাধিকার সূত্রে ওয়ারিস হবে এবং ইমাম মালিক, শাফি‘ঈসহ অন্যান্য বলেন যে, যাবিল আরহাম ওয়ারিস হবে না। মৃত ব্যক্তির যদি কোনো উত্তরাধিকারী ব্যক্তিবর্গ না থাকে তাহলে তার সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে। তারপরও যাবিল আরহাম-কে পরিত্যক্ত সম্পদ দেয়া হবে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৮৯৭; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৫৩-[১৩] ওয়াসিলাহ্ ইবনুল আসক্বা’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্ত্রীলোক তিনটি মীরাস (উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি) সম্পূর্ণরূপে লাভ করে, তার মুক্ত ক্রীতদাসের মীরাস, তার হারানো প্রাপ্ত সন্তানের মীরাস এবং যে সন্তান সম্পর্কে সে লি’আন করেছে তার মীরাস। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَن وائلة بْنِ الْأَسْقَعِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَحُوزُ الْمَرْأَةُ ثَلَاثَ مَوَارِيثَ عَتِيقَهَا وَلَقِيطَهَا وَوَلَدَهَا الَّذِي لَاعَنَتْ عَنْهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

وعن واىلة بن الاسقع قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «تحوز المراة ثلاث مواريث عتيقها ولقيطها وولدها الذي لاعنت عنه» . رواه الترمذي وابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন- একজন মহিলা তিন ধরনের উত্তরাধিকারী সম্পদ লাভ করে, প্রথমতঃ যদি কোনো মহিলা কোনো দাস-দাসীকে আযাদ করে এবং উক্ত দাস দাসীর কোনো ওয়ারিস না থাকে মুনীব ব্যতীত, এমতাবস্থায় ঐ মহিলা মুনীব তার আযাদকৃত দাস-দাসীর সম্পদের ওয়ারিস হবে। দ্বিতীয়তঃ কোনো মহিলা যদি কোনো শিশুকে রাস্তায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পায়, যার কোনো পিতা-মাতা নেই। আর ঐ শিশুর মৃত্যু পরবর্তী পরিত্যক্ত সম্পদে কোনো ওয়ারিস না থাকে, তাহলে ঐ সংগ্রহকারিণী মহিলাই তার সম্পদের ওয়ারিস হবে। এই মতটি শুধুমাত্র ইসহক ইবনে রাহিবিয়্যাহ্ সমর্থন করেছেন, অপরদিকে অন্য সকল ‘আলিম একমত যে, শিশুর সংগ্রহকারীর জন্য কোনো পরিত্যক্ত সম্পদ নেই। দলীল : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- «لَا وَلَاءَ إِلَّا وَلَاءُ الْعَتَاقَةِ» অর্থাৎ- আযাদ করার মাধ্যমে অভিভাবকত্ব অর্জন করা ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে অভিভাবকত্ব নেই। তৃতীয়তঃ যে মহিলার স্বামী তার গর্ভস্থিত সন্তানকে লি‘আনের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করেছে, ঐ গর্ভস্থিত সন্তান জীবিতাবস্থায় জন্মগ্রহণ করলে পরবর্তীতে তার সম্পদ থেকে তার মা ওয়ারিস হবে কিন্তু পিতা ওয়ারিস হবে না এবং তাকে ওয়ারিস বানাবে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৯০৩; তুহফাতুল আওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২১১৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৫৪-[১৪] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোনো ব্যক্তি স্বাধীনা নারী অথবা দাসীর সাথে যিনা করেছে, সে সন্তান হবে যিনার সন্তান। সে যিনাকারীর ওয়ারিস হবে না এবং মাওরূসী (উত্তরাধিকারসূত্রে ভোগদখলকৃত)-ও হবে না। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَيُّمَا رَجُلٍ عَاهَرَ بِحُرَّةٍ أَوْ أَمَةٍ فَالْوَلَد ولد زنى لَا يَرث وَلَا يُورث» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن عمرو بن شعيب عن ابيه عن جده: ان النبي صلى الله عليه وسلم قال: «ايما رجل عاهر بحرة او امة فالولد ولد زنى لا يرث ولا يورث» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে, যদি ব্যভিচারী কোনো পুরুষ কোনো স্বাধীনা নারী অথবা কোনো দাসীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় এবং উক্ত ব্যভিচারের ফলে মহিলার গর্ভে সন্তান ধারণ হয়; তাহলে ঐ সন্তান তার মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত পুরুষ থেকে অথবা তার নিকটতম ব্যক্তি থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে কোনো সম্পদ লাভ করবে না। আর ঐ ব্যভিচারী পুরুষও উক্ত সন্তান থেকে কোনো সম্পদ উত্তরাধিকারী সূত্রে লাভ করবে না। কেননা নসব বা বংশ সাব্যস্ত হলেই কেবল উত্তরাধিকারী সাব্যস্ত হয় অন্যথায় নয়। আর যিনা বা ব্যভিচারের মাধ্যমে বংশ সাব্যস্ত হয় না। (তুহফাতুল আওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২১১৩; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৫৫-[১৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক মুক্ত দাস মারা গেল এবং কিছু মীরাস (উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি) রেখে গেল, কিন্তু সে কোনো আত্মীয়-স্বজন বা সন্তান-সন্ততি রেখে গেল না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার মীরাস তার গ্রামবাসীদের কাউকে দিয়ে দাও। (আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ مَوْلًى لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ وَتَرَكَ شَيْئًا وَلَمْ يَدَعْ حَمِيمًا وَلَا وَلَدًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَعْطُوا مِيرَاثَهُ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ قَرْيَتِهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ

وعن عاىشة: ان مولى لرسول الله صلى الله عليه وسلم مات وترك شيىا ولم يدع حميما ولا ولدا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اعطوا ميراثه رجلا من اهل قريته» . رواه ابو داود والترمذي

ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক দাসের পরিত্যক্ত সম্পদের বণ্টননীতি বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক দাস মৃত্যুবরণ করে এবং সে কিছু সম্পদ রেখে যায়। তার এমন কোনো নিকটাত্মীয় বা সন্তান ছিল না; যে তার সম্পদের মালিক হবে। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার সম্পদকে তার এলাকার বা গ্রামের কোনো ব্যক্তিকে সাদাকা হিসেবে দিয়ে দাও যা দিয়ে সে প্রয়োজন পূরণ করবে। কেননা ঐ সম্পদটা বায়তুল মালের অংশ হিসেবে পরিগণিত হলো। তা মুসলিমদের কল্যাণে ব্যয় করা যাবে। ‘আল্লামা কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রামের ঐ লোকটিকে দাসের পরিত্যক্ত সম্পদ সাদাকা হিসেবে অথবা দয়া-অনুগ্রহ হিসেবে প্রদান করার নির্দেশ দিলেন। কেননা সম্পদটা মূলত বায়তুল মালের। কারো অভাব দূরীকরণের জন্যে তা ব্যয় করা বৈধ। তবে এ কথা সর্বজনবিদিত যে, নাবীরা কারো সম্পদে ওয়ারিস হয় না এবং তাঁরাও কাউকে ওয়ারিস বানায় না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৮৯৯; তুহফাতুল আওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২১০৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৫৬-[১৬] বুরায়দাহ্ আল আসলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খুযা’আহ্ গোত্রের এক (লা-ওয়ারিস) ব্যক্তি মারা গেল এবং তার মীরাস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তার কোনো ওয়ারিস অথবা দূর-আত্মীয় আছে কিনা খোঁজ কর, কিন্তু তারা তার কোনো ওয়ারিস কিংবা আত্মীয়-স্বজন পেল না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খুযা’আহ্ গোত্রের প্রবীণ কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে দাও। (আবূ দাঊদ)[1]

অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, খুযা’আর প্রবীণ কোনো ব্যক্তিকে সন্ধান করে দেখ।

وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: مَاتَ رَجُلٌ مِنْ خُزَاعَةَ فَأُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِيرَاثِهِ فَقَالَ: «الْتَمِسُوا لَهُ وَارِثًا أَوْ ذَا رَحِمٍ» فَلَمْ يَجِدُوا لَهُ وَارِثًا وَلَا ذَا رَحِمٍ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أعْطوا الْكُبْرَ مِنْ خُزَاعَةَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ: قَالَ: «انْظُرُوا أَكْبَرَ رَجُلٍ مِنْ خُزَاعَة»

وعن بريدة قال: مات رجل من خزاعة فاتي النبي صلى الله عليه وسلم بميراثه فقال: «التمسوا له وارثا او ذا رحم» فلم يجدوا له وارثا ولا ذا رحم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اعطوا الكبر من خزاعة» . رواه ابو داود وفي رواية له: قال: «انظروا اكبر رجل من خزاعة»

ব্যাখ্যা : উল্লেখিত হাদীসে ‘‘আযদ’’ প্রদেশের বিখ্যাত ও বৃহৎ গোষ্ঠী খুযা‘আর এক লোক মৃত্যুবরণ করলে তার সম্পদ বণ্টনের জন্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে আসা হলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- তোমরা ঐ মৃত ব্যক্তির ওয়ারিস বা নিকটতম রক্তসম্পর্কীয় কোনো ব্যক্তিকে খুঁজে বের কর। কিন্তু তারা এমন কাউকে খুঁজে পেলেন না যারা তার নিকটতম রক্তসম্পর্কীয় ব্যক্তি হিসেবে সম্পদের মালিক হবে। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- তোমরা তার পরিত্যক্ত সম্পদকে তোমাদের খুযা‘আহ্ গোত্রের সর্দার বা গোত্র প্রধানকে দিয়ে দাও। আর এটা মর্যাদার দিক বিবেচনায়, ওয়ারিস হিসেবে নয়।

কেউ কেউ বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সম্পদকে মৃত ব্যক্তির ঊর্ধবতন কোনো পুরুষ থাকলে তাকে দিতে বলেছেন। তবে কেউ কেউ বলেন, সম্প্রদায়ের প্রবীণ ব্যক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এমন বয়োঃবৃদ্ধ যিনি ঐ মৃত ব্যক্তির ঊর্ধ্বতন কোনো নিকটাত্মীয়। আর এটা শুধুমাত্র মর্যাদার দিক বিবেচনায় হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৯৯০; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৫৭-[১৭] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মৃতের সম্পত্তি বণ্টনের বিষয়ে) তোমরা কি এ আয়াত পড়ে থাক- ’তোমরা যে ওয়াসিয়্যাত কর, সে ওয়াসিয়্যাতও ঋণ আদায়ের পর’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১২)। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণ আদায়ের হুকুম দিয়েছেন ওয়াসিয়্যাতের পূর্বে (যদিও অত্র আয়াতে ঋণের উল্লেখ পরে হয়েছে)। তিনি আরও হুকুম দিয়েছেন, সহোদর ভাই-বোন ওয়ারিস হবে, সৎ ভাই-বোন নয়। সুতরাং ভাই ওয়ারিস হয় একই পিতা-মাতার ঘরের, কেবল এক পিতার সন্তান (ও ভিন্ন মায়ের) ভাইয়ের নয়। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]

কিন্তু দারিমীর বর্ণনায় রয়েছে, সহোদর ভাই ওয়ারিস হবে, সৎ ভাই নয়।

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: إِنَّكُمْ تقرؤون هَذِهِ الْآيَةَ: (مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَو دين)
وَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَضَى بِالدّينِ قبل الْوَصِيَّةِ وَأَنَّ أَعْيَانَ بَنِي الْأُمِّ يَتَوَارَثُونَ دُونَ بَنِي الْعَلَّاتِ الرَّجُلُ يَرِثُ أَخَاهُ لِأَبِيهِ وَأُمِّهِ دُونَ أَخِيهِ لِأَبِيهِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَفِي رِوَايَةِ الدَّارِمِيِّ: قَالَ: «الْإِخْوَةُ مِنَ الْأُمِّ يَتَوَارَثُونَ دُونَ بَنِي الْعَلَّاتِ. . .» إِلَى آخِره

وعن علي رضي الله عنه قال: انكم تقروون هذه الاية: (من بعد وصية توصون بها او دين) وان رسول الله صلى الله عليه وسلم قضى بالدين قبل الوصية وان اعيان بني الام يتوارثون دون بني العلات الرجل يرث اخاه لابيه وامه دون اخيه لابيه . رواه الترمذي وابن ماجه وفي رواية الدارمي: قال: «الاخوة من الام يتوارثون دون بني العلات. . .» الى اخره

ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’টি নির্দেশনা আলোচিত হয়েছে। প্রথমতঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত ব্যক্তির সম্পদে ঋণ আদায়কে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ওয়াসিয়্যাত পূরণ করা হবে ঋণ আদায়ের পর সম্পদ বাকী থাকলে সে সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ দ্বারা।

দ্বিতীয়তঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবশ্যক করেছেন যে, যদি মৃত ব্যক্তির সহোদর ভাই-বোন জীবিত থাকে এবং তাদের সাথে বৈমাত্রেয় ভাই-বোনও বিদ্যমান থাকে, এমতাবস্থায় কেবল সহোদর ভাই-বোন অধিক ঘনিষ্ঠের কারণে তার পরিত্যক্ত সম্পদের ওয়ারিস হবে, বৈমাত্রেয় ভাই-বোন বঞ্চিত হবে। বৈমাত্রেয় ভাই-বোন হলো যাদের পিতা এক তবে মা ভিন্ন। (তুহফাতুল আওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৯৪; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৫৮-[১৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন সা’দ ইবনু রবী’ (রাঃ)-এর ঔরসজাত দুই কন্যাসহ তাঁর স্ত্রী রসূলূলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এ কন্যা দু’টি সা’দ ইবনু রবী’-এর। তাদের পিতা আপনার সাথে উহুদের যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। তাদের চাচা তাদের সকল ধন-সম্পদ নিয়ে গিয়েছে এবং তাদের জন্য কিছুই রাখেননি। অথচ তাদের (ধন-সম্পদ আত্মসাতের কারণে) বিয়ে দেয়া যাবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ এ ব্যাপারে কোনো হুকুম জারি করবে। তখন উত্তরাধিকারের আয়াত নাযিল হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের চাচার কাছে লোক পাঠিয়ে বললেন, সা’দ-এর দুই কন্যাকে দুই-তৃতীয়াংশ এবং তাদের মা-কে অষ্টমাংস দাও; অতঃপর যা অবশিষ্ট থাকবে তা তোমার (হক)। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[1]

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: جَاءَتِ امْرَأَةُ سَعْدِ بْنِ الرَّبِيعِ بِابْنَتَيْهَا مِنْ سَعْدِ بْنِ الرَّبِيعِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَاتَانِ ابْنَتَا سَعْدِ بْنِ الرَّبِيعِ قُتِلَ أَبُوهُمَا مَعَكَ يَوْمَ أُحُدٍ شَهِيدًا وَإِنَّ عَمَّهُمَا أَخَذَ مَالَهُمَا وَلَمْ يَدَعْ لَهُمَا مَالًا وَلَا تُنْكَحَانِ إِلَّا وَلَهُمَا مَالٌ قَالَ: «يَقْضِي اللَّهُ فِي ذَلِكَ» فَنَزَلَتْ آيَةُ الْمِيرَاثِ فَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى عَمِّهِمَا فَقَالَ: «أَعْطِ لِابْنَتَيْ سَعْدٍ الثُّلُثَيْنِ وَأَعْطِ أُمَّهُمَا الثُّمُنَ وَمَا بَقِيَ فَهُوَ لَكَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غريبٌ

وعن جابر قال: جاءت امراة سعد بن الربيع بابنتيها من سعد بن الربيع الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت: يا رسول الله هاتان ابنتا سعد بن الربيع قتل ابوهما معك يوم احد شهيدا وان عمهما اخذ مالهما ولم يدع لهما مالا ولا تنكحان الا ولهما مال قال: «يقضي الله في ذلك» فنزلت اية الميراث فبعث رسول الله صلى الله عليه وسلم الى عمهما فقال: «اعط لابنتي سعد الثلثين واعط امهما الثمن وما بقي فهو لك» . رواه احمد والترمذي وابو داود وابن ماجه وقال الترمذي: هذا حديث حسن غريب

ব্যাখ্যা : এখানে সা‘দ ইবনে রবী‘আহ্-এর পরিত্যক্ত সম্পদ বণ্টননীতি আলোচিত হয়েছে। সা‘দ ইবনু রবী‘আহ্ এক স্ত্রী ও দুই কন্যা রেখে উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। শাহাদাতের পর জাহিলী যুগে মহিলাদের বঞ্চিত করার রীতি অনুযায়ী সমুদয় সম্পদ তার ভাই করায়ত্ত করে নিলেন, দুই মেয়ের ভরণ-পোষণ ও তাদের বিবাহের খরচ নির্বাহের জন্য এক কপর্দক সম্পদও রাখলেন না। তখন স্ত্রী দুই কন্যাকে সাথে নিয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে অভিযোগ করেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে আল্লাহর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করেন। এ সময় আল্লাহ তা‘আলা সূরা নিসার মীরাস সংক্রান্ত আয়াত নাযিল করেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ঐ দুই মেয়ের চাচাকে (সা‘দ-এর ভাই-কে) ডেকে এনে নির্দেশ দিলেন যে, সমুদয় সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সা‘দ-এর কন্যাদ্বয়কে এবং এক-অষ্টমাংশ তাদের মাকে (সা‘দ-এর স্ত্রীকে) প্রদান কর এবং বাকী সম্পদ তুমি আসাবা হিসেবে গ্রহণ কর।

স্ত্রীকে এক-অষ্টমাংশ আল্লাহ তা‘আলার এই বাণীর প্রেক্ষক্ষতঃ ‘‘যদি তোমাদের সন্তান থাকে তাহলে স্ত্রীর জন্য রয়েছে তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পদের এক-অষ্টমাংশ’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১২), এটাই ইসলামের প্রথম মীরাসের আয়াত। (তুহফাতুল আওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৯২; মিরকাতুল মাফাতীহ) 


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৫৯-[১৯] হুযায়ল ইবনু শুরাহ্বীল (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ)-কে কন্যা, পুত্রের কন্যা ও ভগ্নি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, কন্যার অর্ধেক ও ভগ্নির অর্ধেক। তবে একবার ইবনু মাস্’ঊদ -কে জিজ্ঞেস কর, আশা করা যায় তিনিও আমার অনুরূপ বলবেন। ইবনু মাস্’ঊদ -কে জিজ্ঞেস করা হলো এবং তাকে আবূ মূসার উত্তরও জানানো হলো। তিনি বললেন, তবে তো আমি পথভ্রষ্ট হবো এবং সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্গত হব না। আমি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেব, যে সিদ্ধান্ত স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছিলেন, তা হলো- কন্যার অর্ধেক এবং পুত্রের কন্যার এক-ষষ্ঠাংশ, দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ণ করার উদ্দেশে। আর অবশিষ্ট যা থাকবে, তা (এক-তৃতীয়াংশ) ভগ্নির। রাবী বলেন, অতঃপর আমরা আবূ মূসা -এর নিকট গেলাম এবং তাঁকে ইবনু মাস্’ঊদ-এর উত্তর জানালাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করো না তোমাদের মধ্যে যতক্ষণ এ মহাপণ্ডিত বিদ্যমান আছেন। (বুখারী)[1]

وَعَنْ هُزَيْلِ بْنِ شُرَحْبِيلَ قَالَ: سُئِلَ أَبُو مُوسَى عَنِ ابْنَةٍ وَبِنْتِ ابْنٍ وَأُخْتٍ فَقَالَ: للْبِنْت النّصْف وَللْأُخْت النّصْف وائت ابْنَ مَسْعُودٍ فَسَيُتَابِعُنِي فَسُئِلَ ابْنُ مَسْعُودٍ وَأُخْبِرَ بقول أبي مُوسَى فَقَالَ: لقد ضللت إِذن وَمَا أَنَا مِنَ الْمُهْتَدِينَ أَقْضِي فِيهَا بِمَا قَضَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِلْبِنْتِ النِّصْفُ وَلِابْنَةِ الِابْنِ السُّدُسُ تَكْمِلَةَ الثُّلُثَيْنِ وَمَا بَقِيَ فَلِلْأُخْتِ» فَأَتَيْنَا أَبَا مُوسَى فَأَخْبَرْنَاهُ بِقَوْلِ ابْنِ مَسْعُودٍ فَقَالَ: لَا تَسْأَلُونِي مَا دَامَ هَذَا الحبر فِيكُم. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن هزيل بن شرحبيل قال: سىل ابو موسى عن ابنة وبنت ابن واخت فقال: للبنت النصف وللاخت النصف واىت ابن مسعود فسيتابعني فسىل ابن مسعود واخبر بقول ابي موسى فقال: لقد ضللت اذن وما انا من المهتدين اقضي فيها بما قضى النبي صلى الله عليه وسلم: «للبنت النصف ولابنة الابن السدس تكملة الثلثين وما بقي فللاخت» فاتينا ابا موسى فاخبرناه بقول ابن مسعود فقال: لا تسالوني ما دام هذا الحبر فيكم. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসে একটি বণ্টননীতি আলোচিত হয়েছে। আবূ মূসা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল- ‘‘কোনো ব্যক্তি যদি এক কন্যা, এক পৌত্রী এবং এক বোন রেখে মারা যান- তাদের মাঝে কিভাবে সম্পদ বণ্টন করা হবে। তখন আবূ মূসা বলেন- এক কন্যা পাবে অর্ধাংশ, এটা ছিল আল্লাহর বিধানের ভিত্তিতে। আর কন্যা যদি একজন হয়, তাহলে তার জন্যে রয়েছে অর্ধাংশ’’। (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৭৬)

উক্ত আয়াতে ‘‘ওয়ালাদ’’ অর্থ সন্তান এতে নর-নারী উভয়েই অন্তর্ভুক্ত। সম্ভবত আবূ মূসা এ বিষয়ে অমনোযোগী ছিলেন। অথবা তিনি ‘‘ওয়ালাদ’’ দ্বারা শুধু পুরুষকেই বুঝতে পেরেছিলেন। অথবা আসাবা হিসেবে বোনের অর্ধাংশের কথা বুঝিয়েছেন।

অতঃপর এই মাসআলায় ইবনু মাস্‘ঊদকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেন- এক কন্যা পাবে অর্ধাংশ এবং পৌত্রী পাবে এক-ষষ্ঠাংশ (আর এটা হলো কন্যা ও পৌত্রীর অংশ দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ণ করার জন্যে) ও অবশিষ্ট সম্পদ বোন আসাবা হিসেবে পাবে। এভাবেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বণ্টন করেছেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৭৩৬; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৬০-[২০] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! আমার পুত্রের পুত্র মারা গেছে, আমার জন্য তার উত্তরাধিকারের কি (কিছু) রয়েছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার জন্য এক-ষষ্ঠাংশ রয়েছে। সে যখন রওনা দিল, তখন তাকে ডেকে বললেন, তোমার জন্য আরেক ষষ্ঠাংশ রয়েছে। সে যখন যেতে লাগল, আবার ডেকে বললেন, দ্বিতীয়-ষষ্ঠাংশ তুমি নি’আমাতরূপে পেলে। (আহমাদ, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ; ইমাম তিরমিযী [রহঃ] বলেন, এটা হাসান সহীহ)[1]

وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِن ابْنِي مَاتَ فَمَا لِي مِنْ مِيرَاثِهِ؟ قَالَ: «لَكَ السُّدُسُ» فَلَمَّا وَلَّى دَعَاهُ قَالَ: «لَكَ سُدُسٌ آخَرُ» فَلَمَّا وَلَّى دَعَاهُ قَالَ: «إِنَّ السُّدُسَ الْآخَرَ طُعْمَةٌ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ

وعن عمران بن حصين قال: جاء رجل الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: ان ابني مات فما لي من ميراثه؟ قال: «لك السدس» فلما ولى دعاه قال: «لك سدس اخر» فلما ولى دعاه قال: «ان السدس الاخر طعمة» . رواه احمد والترمذي وابو داود وقال الترمذي: هذا حديث حسن صحيح

ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তির জিজ্ঞাসার জবাব দিচ্ছেন- লোকটি জিজ্ঞেস করলেন আমার ছেলে মৃত্যুবরণ করেন- এমতাবস্থায় সে দুই মেয়ে এবং আমাকে (তথা আমি তার পিতা) রেখে যান। আমি তার সম্পদ থেকে কী পাব? তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- দুই মেয়ে পাবে সমুদয় সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ আর তুমি দু’ভাবে সম্পদ পাবে- তাহলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত এক-ষষ্ঠাংশ এবং অবশিষ্ট সম্পদ আসাবা হিসেবে পাবে। আর তাও এক-ষষ্ঠাংশ। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নি‘আমাত। যা তুমি অর্জন করেছ মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীর সংখ্যা কম হওয়ার কারণে। কেননা যদি আরো কোনো উত্তরাধিকারী থাকত তাহলে অবশিষ্টাংশের মধ্যে ঘাটতি এসে যেত। আর হাদীসে طُعْمَةٌ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আসাবা, যা অনির্ধারিত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৮৯৩; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৯৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৬১-[২১] কবীসাহ্ ইবনু যুআয়ব হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ)-এর নিকট এক নানী এসে তার (কন্যার সন্তানের) উত্তরাধিকারের ব্যাপারে জানতে চাইলেন। তিনি তাকে বললেন, আল্লাহর কিতাবে তোমার কোনো অংশ নেই এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতেও তোমার কোনো অংশ নেই। এখন যাও! আমি সাহাবীদের জিজ্ঞেস করে দেখি। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলে মুগীরাহ্ ইবনু শু’বাহ্ (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, তিনি নানীকে ছয় ভাগের এক ভাগ দিয়েছেন। তখন আবূ বকর(রাঃ) বললেন, আপনার সাথে আপনি ছাড়া অপর কেউ ছিল কি? তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ মুগীরাহ্-এর কথার অনুরূপ বললেন।

অতএব আবূ বকর(রাঃ) তার জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ দেয়ার হুকুম দিলেন। (কবীসাহ্ বলেন,) অতঃপর একদিন অন্য দাদী এসে ’উমার (রাঃ)-কে তার উত্তরাধিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন, সে ছয় ভাগের এক ভাগই। তোমরা যদি উভয়ে থাক তবে তা তোমাদের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন হবে। তবে উভয়ের মধ্যে একজন হলে তা তারই (হক) হবে। (মালিক, আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, দারিমী ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ قَبِيصَةَ بْنِ ذُؤَيْبٍ قَالَ: جَاءَتِ الْجَدَّةُ إِلَى أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ تَسْأَلُهُ مِيرَاثَهَا فَقَالَ لَهَا: مَا لَكِ فِي كِتَابِ اللَّهِ شَيْءٌ وَمَا لَكِ فِي سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْءٌ فَارْجِعِي حَتَّى أَسْأَلَ النَّاسَ فَسَأَلَ فَقَالَ الْمُغِيرَةُ بْنُ شُعْبَةَ: حَضَرْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْطَاهَا السُّدُسَ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ الله عَنهُ هَل مَعَك غَيره؟ فَقَالَ مُحَمَّدُ بْنُ مَسْلَمَةَ مِثْلَ مَا قَالَ الْمُغيرَة فأنفذه لَهَا أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ثُمَّ جَاءَتِ الْجدّة الْأُخْرَى إِلَى عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ تَسْأَلُهُ مِيرَاثَهَا فَقَالَ: هُوَ ذَلِك السُّدس فَإِن اجْتمعَا فَهُوَ بَيْنَكُمَا وَأَيَّتُكُمَا خَلَتْ بِهِ فَهُوَ لَهَا. رَوَاهُ مَالِكٌ وَأَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالدَّارِمِيُّ وَابْن مَاجَه

وعن قبيصة بن ذويب قال: جاءت الجدة الى ابي بكر رضي الله عنه تساله ميراثها فقال لها: ما لك في كتاب الله شيء وما لك في سنة رسول الله صلى الله عليه وسلم شيء فارجعي حتى اسال الناس فسال فقال المغيرة بن شعبة: حضرت رسول الله صلى الله عليه وسلم اعطاها السدس فقال ابو بكر رضي الله عنه هل معك غيره؟ فقال محمد بن مسلمة مثل ما قال المغيرة فانفذه لها ابو بكر رضي الله عنه ثم جاءت الجدة الاخرى الى عمر رضي الله عنه تساله ميراثها فقال: هو ذلك السدس فان اجتمعا فهو بينكما وايتكما خلت به فهو لها. رواه مالك واحمد والترمذي وابو داود والدارمي وابن ماجه

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে এক দাদী আবূ বাকর -কে তার প্রাপ্ত অংশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে বলেন, দাদীর অংশ কুরআন-হাদীসে বর্ণিত হয়নি। সুতরাং আমি সাহাবীদেরকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করব। তিনি মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাদীকে এক-ষষ্ঠাংশ দিয়েছেন। আবূ বাকর এভাবে দু’জনের সাক্ষ্য নিয়ে দাদীকে এক-ষষ্ঠাংশ দিয়ে দিলেন।

অনুরূপভাবে অন্য একজন দাদী ‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব-এর নিকটে আসলে তিনি তাকে এক-ষষ্ঠাংশ দেন। তবে এই এক-ষষ্ঠাংশ দাদীর প্রাপ্তাংশ, চাই দাদী একজন হোক বা একাধিক হোক। তবে এক্ষেত্রে যদি দাদীর সাথে মৃত ব্যক্তির মা থাকে তাহলে দাদী-নানী সবাই বঞ্চিত হবে। আর যদি মৃত ব্যক্তির পিতা থাকে তাহলে শুধুমাত্র দাদী বঞ্চিত হবে নানী বঞ্চিত হবে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২১০০; মিরকাতুল মাফাতীহ)

বিঃ দ্রঃ ‘আরবীতে جَدَّةٌ শব্দের অর্থ- দাদী-নানী। তাই দাদী-নানীর একই বিধান।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৬২-[২২] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দাদী তার নিজ ছেলের সাথে থাকলে (নাতির) উত্তরাধিকার পাবে কিনা সে ব্যাপারে বলেন যে, সে হলো প্রথম দাদী যাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ ছেলের সাথে এক-ষষ্ঠাংশ দিয়েছেন, অথচ তার ছেলে জীবিত। (তিরমিযী ও দারিমী; কিন্তু ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে য’ঈফ বলেছেন)[1]

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ فِي الْجَدَّةِ مَعَ ابْنِهَا: أَنَّهَا أَوَّلُ جَدَّةٍ أَطْعَمَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُدُسًا مَعَ ابْنِهَا وَابْنُهَا حَيٌّ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَالتِّرْمِذِيُّ ضَعَّفَهُ

وعن ابن مسعود قال في الجدة مع ابنها: انها اول جدة اطعمها رسول الله صلى الله عليه وسلم سدسا مع ابنها وابنها حي. رواه الترمذي والدارمي والترمذي ضعفه

ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাদীকে এক-ষষ্ঠাংশ দিয়েছেন মীরাস হিসেবে নয় বরং দান-অনুদান হিসেবে। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম দাদীকে এভাবে সম্পদ দিয়েছেন। যদিও পিতার বর্তমানে দাদী কোনো মীরাস পায় না। এটাই জুমহূর সাহাবী, তাবি‘ঈ ও ইমামদের মত। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২১০২; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৬৩-[২৩] যহহাক ইবনু সুফ্ইয়ান হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে লিখেছেন, আশ্ইয়াম আয্ যিবাবী-এর স্ত্রীকে তার স্বামীর রক্তপণের অংশ দাও! (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ; ইমাম তিরমিযী [রহঃ] বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ)[1]

وَعَنِ الضَّحَّاكِ بْنِ سُفْيَانَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَتَبَ إِلَيْهِ: «أَنْ ورث امْرَأَة أَشْيَم الضبابِي مِنْ دِيَةِ زَوْجِهَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيح

وعن الضحاك بن سفيان: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كتب اليه: «ان ورث امراة اشيم الضبابي من دية زوجها» . رواه الترمذي وابو داود وقال الترمذي: هذا حديث حسن صحيح

ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যহ্হাক ইবনু সুফ্ইয়ান-কে চিঠির মাধ্যমে জানালেন যে, যিবাবী সাহাবী যাকে ভুলক্রমে হত্যা করা হয়েছে তার স্ত্রীকে প্রাপ্ত দিয়াত থেকে মীরাস দাও। হত্যাকারীর ওপর ধার্যকৃত ক্ষতিপূরণ থেকে প্রাপ্ত সম্পদ সর্বপ্রথম হত্যাকৃত ব্যক্তিই মালিক হবে। অতঃপর ঐ রক্তমূল্য বা দিয়াত হত্যাকৃত ব্যক্তির অন্যান্য সম্পদের মতো ওয়ারিসদের মাঝে বণ্টন করা হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৯২৫; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৪১৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৬৪-[২৪] তামীম আদ্ দারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, শারী’আতে একজন মুশরিক কোনো মুসলিমের হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার (উত্তরাধিকারের) হুকুম কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সে মুসলিম তার নিকটতম ব্যক্তি তার জীবনে ও মরণে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]

وَعَنْ تَمِيمٍ الدَّارِيِّ قَالَ: سَأَلَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا السُّنَةُ فِي الرَّجُلِ مِنْ أَهْلِ الشِّرْكِ يُسْلِمُ عَلَى يَدَيْ رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ؟ فَقَالَ: «هُوَ أَوْلَى النَّاسِ بِمَحْيَاهُ وَمَمَاتِهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ

وعن تميم الداري قال: سالت رسول الله صلى الله عليه وسلم: ما السنة في الرجل من اهل الشرك يسلم على يدي رجل من المسلمين؟ فقال: «هو اولى الناس بمحياه ومماته» . رواه الترمذي وابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি জিজ্ঞাসার উত্তর দিচ্ছেন, মুশরিকদের মধ্য থেকে যদি কোনো ব্যক্তি অপর কোনো মুসলিমের হাতে ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে শারী‘আতের বিধান কী? তথা যার হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছে সে কি ঐ লোকটির অভিভাবক হবে? ঐ লোকটির মৃত্যুর পর পরিত্যক্ত সম্পদের কে মালিক হবে? তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেন- যদি কোনো উত্তরাধিকারী না থাকে তাহলে যার হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছে সেই ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তির জীবনে ও মরণে সবচেয়ে নিকটতর ব্যক্তি। অর্থাৎ- ওয়ারিসদের অনুপস্থিতিতে ঐ লোকটিই তার সম্পদের মালিক হবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২১১২; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ তামীম আদ্ দারী (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৬৫-[২৫] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক মারা গেল এবং তার মুক্ত করা একটি ক্রীতদাস ছাড়া কাউকেও উত্তরাধিকারী রেখে গেল না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তার কি কেউ (আত্মীয়-স্বজন) আছে? লোকেরা বলল, তার মুক্ত করা একটি ক্রীতদাস ছাড়া আর কেউই নেই। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উত্তরাধিকার তাকে (ক্রীতদাসকে) দিয়ে দিলেন। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ رَجُلًا مَاتَ وَلَمْ يَدَعْ وَارِثًا إِلَّا غُلَامًا كَانَ أَعْتَقَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ لَهُ أَحَدٌ؟» قَالُوا: لَا إِلَّا غُلَامٌ لَهُ كَانَ أَعْتَقَهُ فَجَعَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِيرَاثَهُ لَهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَه

وعن ابن عباس: ان رجلا مات ولم يدع وارثا الا غلاما كان اعتقه فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «هل له احد؟» قالوا: لا الا غلام له كان اعتقه فجعل النبي صلى الله عليه وسلم ميراثه له. رواه ابو داود والترمذي وابن ماجه

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটির যাবতীয় সম্পদ দাসকে দিয়ে দেন। কেননা সম্পদে মূলত কোনো উত্তরাধিকারী না থাকায় বায়তুল মাল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সম্পদকে দানের ভিত্তিতে দাসকে দিয়ে দেন মীরাসের ভিত্তিতে নয়। কাযী শুরাইহ, ত্বাঊস প্রমুখ বিদ্বানগণ অবশ্য আযাদকৃত ব্যক্তিকেও আযাদকারীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির অন্য কোনো ওয়ারিস না থাকলে ওয়ারিস সাব্যস্ত করে থাকেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৯০২; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২১০৬; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »