ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামী ফিকাহ প্রথম পর্ব - তাওহীদ ও ঈমান মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত্তুওয়াইজিরী
১. তাওহীদ

আল্লাহর বাণী:

یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اعۡبُدُوۡا رَبَّکُمُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ وَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ ﴿ۙ۲۱﴾  الَّذِیۡ جَعَلَ لَکُمُ الۡاَرۡضَ فِرَاشًا وَّ السَّمَآءَ بِنَآءً ۪ وَّ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخۡرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرٰتِ رِزۡقًا لَّکُمۡ ۚ فَلَا تَجۡعَلُوۡا لِلّٰهِ اَنۡدَادًا وَّ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۲۲﴾

‘‘হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে। যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকে সমকক্ষ করো না। বস্ত্তত: এসব তোমরা জান।’’ [সূরা বাকারা: ২১-২২]


তাওহীদ:

তাওহীদ হলো: আল্লাহ তা‘য়ালাকে তাঁর জন্য যা নির্দিষ্ট এবং ওয়াজিব সেসব বিষয়ে একক সাব্যস্ত করা।

বান্দা এ একিন-দৃঢ় বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তাঁর রবূবিয়াতে তথা কার্যাদিতে, আসমা-সিফাতে মানে নাম ও গুণাবলীতে একক এবং উলূহিয়াতে অর্থাৎ বান্দার সকল ইবাদত কোন শরিক ছাড়াই একমাত্র তাঁরই জন্য নির্দিষ্ট করা সবচেয়ে বড় ফরজ।


তাওহীদের অর্থ:

বান্দা দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে এবং স্বীকার করবে যে, আল্লাহ একক, সবকিছুর প্রতিপালক ও মালিক। তিনিই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা এবং পৃথিবীর মহাব্যবস্থাপক। আর তিনিই একমাত্র ইবাদতের হকদার, তাঁর কোন শরিক নেই। তিনি ছাড়া সকল মা‘বূদ বাতিল। তিনি পূর্ণ গুণে গুণান্বিত, সর্বপ্রকার ত্রুটি ও অপূর্ণতা থেকে পবিত্র। তাঁর সুন্দরতম নাম ও উচ্চমানের গুণ রয়েছে।

আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ؕ لَهُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی ﴿۸﴾

‘‘আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ্-উপাস্য নেই। সব সৌন্দর্যমন্ডিত নাম তাঁরই।’’ [সূরা ত্বহা:৮]


তাওহীদের সূক্ষ্ম বূঝ:

আল্লাহ তা‘য়ালা একক, তাঁর কোন শরিক নেই। তিনি এক তাঁর সত্ত্বায়, নাম ও গুণাবলীতে এবং কাজে কেউ তাঁর সদৃশ নেই। তাঁরই সমস্ত রাজত্ব, সৃষ্টি ও নির্দেশ। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই।

তিনি মালিক আর বাকি সবই তাঁর দাস। তিনিই প্রতিপালক আর সকলেই তাঁর বান্দা। তিনিই সৃষ্টিকর্তা আর বাকি সবকিছুই তাঁর সৃষ্টিরাজি।

قُلۡ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ ۚ﴿۱﴾ اَللّٰهُ الصَّمَدُ ۚ﴿۲﴾ لَمۡ یَلِدۡ ۬ۙ وَ لَمۡ یُوۡلَدۡ ۙ﴿۳﴾ وَ لَمۡ یَکُنۡ لَّهٗ کُفُوًا اَحَدٌ ﴿۴﴾


‘‘বলুন, তিনি আল্লাহ, একক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি এবং তাঁর সমতূল্য কেউ নেই।’’ [সূরা এখলাস:১-৪]

আল্লাহ ক্ষমতাবান এবং তিনি ব্যতীত সকলে দুর্বল--। তিনি শক্তিমান আর বাকি সব অক্ষম। তিনি মহান আর সবই ক্ষুদ্র। তিনি অমুখাপেক্ষী আর সকলে তাঁরই মুখাপেক্ষী। তিনি শক্তিশালী ও সবই দুর্বল। তিনি মহাসত্য এবং তিনি ছাড়া সকল উপাস্য বাতিল। আল্লাহর বাণী:

ذٰلِکَ بِاَنَّ اللّٰهَ هُوَ الۡحَقُّ وَ اَنَّ مَا یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِهِ الۡبَاطِلُ ۙ وَ اَنَّ اللّٰهَ هُوَ الۡعَلِیُّ الۡکَبِیۡرُ ﴿۳۰﴾


‘‘এটাই প্রমাণ যে, আল্লাহ্-ই সত্য এবং আল্লাহ ব্যতীত তারা যাদের পূজা করে সব মিথ্যা। আল্লাহ্ সর্বোচ্চ, মহান।’’ [সূরা লোকমান:৩০]

তিনি মহান তাঁর চাইতে আর কেউ সুমহান নেই। তিনি সর্বোচ্চ তাঁর চাইতে কেউ উচ্চ নেই। তিনি বড় যার চাইতে আর কেউ বড় নেই। তিনি মেহেরবান তাঁর চাইতে কেউ বেশি দয়াবান নেই।

তিনি শক্তিধর, যিনি প্রত্যেক শক্তিশালীর মাঝে শক্তি সৃষ্টি করেন। তিনি শক্তিমান, যিনি সকল শক্তিমানের মধ্যে শক্তি সৃষ্টি করেছেন। তিনি পরম করুণাময়, যিনি প্রত্যেক করুণাকারীর ভিতরে করুণা সৃষ্টি করেছেন। তিনি মহাজ্ঞানী, যিনি সকল সৃষ্টিকে জানেন। তিনি রিজিকদাতা, যিনি প্রত্যেকটি রিজিক ও রিজিকপ্রাপ্তদেরকে সৃষ্টি করেছেন।


আল্লাহ তা‘য়ালার বাণী:

ذٰلِکُمُ اللّٰهُ رَبُّکُمۡ ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ خَالِقُ کُلِّ شَیۡءٍ فَاعۡبُدُوۡهُ ۚ وَ هُوَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ وَّکِیۡلٌ ﴿۱۰۲﴾  لَا تُدۡرِکُهُ الۡاَبۡصَارُ ۫ وَ هُوَ یُدۡرِکُ الۡاَبۡصَارَ ۚ وَ هُوَ اللَّطِیۡفُ الۡخَبِیۡرُ ﴿۱۰۳﴾


‘‘তিনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা। অতএব, তোমরা তাঁরই ইবাদত কর। তিনি প্রত্যেক বস্ত্তর কার্যনির্বাহী। দৃষ্টিসমূহ তাঁকে পেতে পারে না, অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে পেতে পারেন। তিনি অত্যান্ত সূক্ষ্মদর্শী, সুবিজ্ঞ।’’ [সূরা আন‘আম:১০২-১০৩]

তিনিই সত্য ইলাহ্ যিনি তাঁর সত্ত্বা, মহত্ত্ব, সৌন্দর্য ও উত্তম এহসানের জন্য একমাত্র সমস্ত ইবাদতের হকদার। একমাত্র তাঁরই জন্য সুন্দরতম নাম ও তিনিই সুউচ্চ গুণাবলীর অধিকারী। আল্লাহর বাণী:

لَیۡسَ کَمِثۡلِهٖ شَیۡءٌ ۚ وَ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ ﴿۱۱﴾

‘‘কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন।’’ [সূরা শূরা:১১]

 

তিনি অভিজ্ঞ, মহাজ্ঞানী যিনি যা ইচ্ছা তাই করেন এবং যা ইচ্ছা তাই নির্দেশ করেন। আল্লাহর বাণী:

اَلَا لَهُ الۡخَلۡقُ وَ الۡاَمۡرُ ؕ تَبٰرَکَ اللّٰهُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۵۴﴾


‘‘জেনে রাখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ করা। আল্লাহ্, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।’’ [সূরা আ‘রাফ: ৫৪]

তিনিই প্রথম সবকিছুর পূর্বে ও শেষ সবকিছুর পরে এবং তিনিই প্রকাশমান সবকিছুর উপরে ও অপ্রকাশমান সবকিছুর নিচে। তিনি সবকিছু অবগত এবং একক তাঁর কোন শরিক নেই। আল্লাহর বাণী:

هُوَ الۡاَوَّلُ وَ الۡاٰخِرُ وَ الظَّاهِرُ وَ الۡبَاطِنُ ۚ وَ هُوَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿۳﴾

 

‘‘তিনিই সর্বপ্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।’’ [সূরা হাদীদ:৩]

তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা সত্য মালিক যাঁর হাতে সবকিছু। আর তিনি ছাড়া আর কারো হাতে কিছু নেই। অতএব, কোন শরিক ছাড়া একমাত্র তাঁরই অভিমুখে রওয়ানা হও।

আল্লাহ তা‘য়ালার বাণী:

قُلِ اللّٰهُمَّ مٰلِکَ الۡمُلۡکِ تُؤۡتِی الۡمُلۡکَ مَنۡ تَشَآءُ وَ تَنۡزِعُ الۡمُلۡکَ مِمَّنۡ تَشَآءُ ۫ وَ تُعِزُّ مَنۡ تَشَآءُ وَ تُذِلُّ مَنۡ تَشَآءُ ؕ بِیَدِکَ الۡخَیۡرُ ؕ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۲۶﴾


‘‘বলুন হে আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।’’ [সূরা আল-ইমরান:২৬]

তিনিই আল্লাহ একমাত্র প্রতিটি জিনিসের মালিক, তিনিই প্রতিটি জিনিসের প্রতি ক্ষমতাশালী, তিনিই প্রতিটি জিনিস সম্পর্কে মহাজ্ঞানী, তিনিই প্রতিটি বস্ত্তর দানকারী। তিনিই প্রতিটি বিষয়ের একমাত্র নিয়ন্ত্রণকারী, তিনিই প্রত্যেক ক্ষমতাবানের প্রতি ক্ষমতাশীল, তিনিই প্রত্যেক পরাক্রমশালীর মহাপরাক্রমশালী। তিনিই একক প্রত্যেকের মালিক।

আল্লাহ তা‘য়ালার বাণী:

تَبٰرَکَ الَّذِیۡ بِیَدِهِ الۡمُلۡکُ ۫ وَ هُوَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرُۨ ۙ﴿۱﴾

‘‘মহাপূণ্যময় তিনি, যার হাতে রাজত্ব। আর তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর ক্ষমতাবান’’ [সূরা মুলক:১]