শাসকের বিরোধিতা করাকে মর্যাদাকর মনে করা এবং তার আনুগত্য করা ও তাকে মেনে নেয়া অপমান ও লাঞ্ছণাদায়ক মনে করা।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়য় তাদের বিরোধিতা করেন। বরং তিনি শ্রবণ করা, তাদের অনুগত থাকা ও তাদের কল্যাণ কামনার নির্দেশ দেন। শাসকের অনুগত থাকা ও তার কথা শ্রবণ করার ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ করেন। আর সকলকে এ বিষয়ে বারবার তাকিদ করেন। আর উপরোক্ত তিনটি বিষয়ে ছ্বহীহ হাদীসে একত্রে নির্দেশ দেয়া হয়েছে,

إن الله يرضى لكم ثلاثاً: أن تعبدوه ولا تشركوا به شيئاً، وأن تعتصموا بحبل الله جميعاً ولا تفرقوا، وأن تناصحوا من ولاه الله أمركم

আল্লাহ তোমাদের উপর তিনটি ব্যাপারে খুশী হন: (১) তোমরা কেবলমাত্র আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাঁর সংগে কাউকে শরীক করো না। (২) তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রজ্জুকে মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং আর বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ো না (৩) আল্লাহ যাদেরকে তোমাদের উপর শাসন ক্ষমতা দান করেন, তাদেরকে সু-পরামর্শ দিবে।[1] এ তিনটি বিষয়ের সম্পূর্ণ অথবা আংশিক লঙ্ঘন করার কারণে মানুষের দীন ও দুনিয়াবী বিষয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

...............................................

ব্যাখ্যা: কতিপয় জাহিলী সমস্যা: জাহিলরা শাসকের প্রতি অনুগত নয়। অনুগত থাকাকে তারা অসম্মানের কারণ মনে করে। শাসকের অবাধ্য হওয়াকে মর্যাদাকর ও স্বাধীনতা হিসাবে তারা গ্রহণ করে। একারণে কোন ইমাম (নেতা) ও আমীর (শাসক) তাদেরকে জামা‘আতবদ্ধ করতে পারে না। কেননা তারা অনুগত নয়। তারা দাম্ভিক ও অহংকারী। ইসলাম তাদের এ কাজের বিরোধিতা করে। সেই সাথে ইসলাম মুসলিম শাসকের কথা শ্রবণ করা ও তার প্রতি অনুগত থাকার নির্দেশ দেয়, যা কল্যাণকর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ) [النساء: 59]

হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের (সূরা আন নিসা ৪:৫৯)।

এ আয়াত থেকে শাসকের প্রতি আনুগত্যের নির্দেশ প্রমাণিত হয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবাধ্যতায় আনুগত্যের সীমা নির্ধারণ করে বলেন,

لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق

অর্থাৎ স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির আনুগত্য নেই।[2] তিনি আরোও বলেন,

إنما الطاعة في المعروف

আনুগত্য শুধু সৎকাজে।[3]

তাই আল্লাহর অবাধ্যতা ব্যতীত শাসকের আনুগত্য করা ওয়াজীব-আবশ্যক। শাসক অবাধ্যতার নির্দেশ দিলে তার আনুগত্য করা যাবে না। অবাধ্য বিষয় ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে তার বিরোধিতা করা যাবে না। বিশেষত যে বিষয়ে অবাধ্যতা রয়েছে সে ব্যাপারে আদৌ শাসকের আনুগত্য করা যাবে না। এ কারণে শাসক ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকলে অন্যান্য বিষয়ে তার বাইয়াত ভঙ্গ করা যাবে না এবং তার বিরোধিতাও করা যাবে না। কেননা একতাবদ্ধ থাকা, রক্তপাত নিবৃত্ত করা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অত্যাচারীর হাত থেকে নির্যাতিতদের রক্ষা করা, মানুষের অধিকার রক্ষা করা ও ন্যায়ভিত্তিক শাসন প্রতিষ্ঠা শাসকের আনুগত্যের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। এমনকি শাসক যদি দীনের উপর অটল না থাকে ও ফাসিকও হয়, কিন্তু কুফরীতে লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তার আনুগত্য করতে হবে। যেমন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

اسمعوا وأطيعوا، إلا أن تروا كفراً بواحاً عندكم عليه من الله برهان

তোমরা শাসকের কথা শ্রবণ করবে ও তার অনুগত থাকবে কিন্তু যদি স্পষ্ট কুফরী দেখ, তোমাদের কাছে আল্লাহর তরফ থেকে যে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তাহলে আলাদা কথা।[4]
শাসক কুফরী ব্যতীত অন্যান্য অবাধ্যতায় লিপ্ত হলেও তার কথা শ্রবণ করতে হবে ও তার অনুগত থাকতে হবে, যদি তার নের্তৃত্ব ও তার প্রতি অনুগত থাকা মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর হয়। তবে ফাসিকী শাসকের উপরই বর্তাবে।

>
[1]. ছ্বহীহ মুসলিম হা/১৭১৫।

[2]. ছ্বহীহ: মুসনাদে আহমাদ, ছ্বহীহ জামে হা/৭৫২০।

[3]. ছ্বহীহ বুখারী হা/৭২৫৭ , ছ্বহীহ মুসলিম হা/১৮৪০।

[4]. ছ্বহীহ বুখারী হা/৭০৫৬ , ছ্বহীহ মুসলিম হা/১৭০৯।